ডিসি পদে রদবদল

জনপ্রশাসনে রদবদল এবং কর্মকর্তাদের কর্মস্থল পরিবর্তন অবশ্যই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সামনে সাধারণ নির্বাচন থাকায় এখন থেকে জনপ্রশাসনে বড় ধরনের কোনো রদবদল সংগত কারণেই বিশেষ মনোযোগের কারণ হতে পারে। একসঙ্গে ২২ জেলায় ডেপুটি কমিশনার এবং ১৫ জেলায় পুলিশ সুপার বদলের পরে আরও বেশি রদবদলের খবর বেরিয়েছে। সুতরাং এসব রদবদল রুটিন হোক বা না হোক, জনপ্রশাসনে এখন থেকে আনা প্রতিটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের গতিপ্রকৃতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে সতর্ক নজর রাখা। কারণ, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড গঠনে জনপ্রশাসনের একটি বড় ভূমিকা থাকার বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সচিব পরিবর্তন বিষয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া ইসিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। এতে সন্দেহ সামান্য যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর্ব ছাড়া ইসি জনপ্রশাসনে বদলি বা কর্মস্থল নির্ধারণে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত দিতে পারে না। আবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে বিরোধী দলের দাবি অনুযায়ী হোক বা না হোক, বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনলে তার একটি নেতিবাচক প্রভাব ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ওপর পড়তে পারে। সুতরাং এই অবস্থায় ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি সব পক্ষের জন্য সমান সুযোগের দিকে না থাকে, তাহলে তার ঘাটতি পূরণ করা ইসির পক্ষে কঠিন হতে পারে। ডেপুটি কমিশনাররা রিটার্নিং অফিসার না হলেও নির্বাচনকালীন প্রশাসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবেন। আর তাঁরা রিটার্নিং অফিসার হলে তো তাঁদের গুরুত্ব আরও বাড়বে। এটা সুবিদিত যে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী প্রার্থীরা ডিসি-এসপি নিয়োগে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকেন। নির্বাচনী বছরে এটি যে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে,
সে বিষয়ে আর সন্দেহ কী? ক্ষমতাসীন দলকে বিবেচনায় নিতে হবে যে তারা যেহেতু দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংকল্পবদ্ধ, তাই তাদের পক্ষে সম্ভব সব রকম উপায়ে জনপ্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সেই হিসাবে নির্বাচন কমিশনের একটি নৈতিক দায়িত্ব বর্তায় জনপ্রশাসনের রদবদল বিষয়ে সরকারের কী কর্তব্য, তা কোনো একটি উপযুক্ত উপায়ে এখন থেকেই স্মরণ করিয়ে দেওয়া। অন্যথায় সরকারি দল যদি তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্ত প্রশাসনে তাদের অবস্থান শক্ত করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়, তাহলে তফসিল ঘোষণার পর অল্প সময়ে পরিবর্তন আনা প্রায় অসম্ভব বলে বিবেচিত হতে পারে। ডিসি রদবদলে বড় আশঙ্কা হলো তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তাদের নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার করেনি। ঐতিহ্যগতভাবে ডিসিরাই এটা পালন করে আসছিলেন। এটাও সত্য যে ডিসিদের দিয়ে আমরা ভালো-মন্দ দুই ধরনের নির্বাচনই করিয়েছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের চারটি সুষ্ঠু নির্বাচনই ডিসিদের করা। সুতরাং ক্যাডার হিসেবে তাঁদের নিশ্চয় খাটো করা যাবে না। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা কুমিল্লার তৎকালীন ডিসি হিসেবে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন করে নিন্দিত আবার জুনের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে নন্দিত হয়েছিলেন। সুতরাং সরকার কী চাইছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন একান্তভাবে স্বাধীন সংস্থা হিসেবে ইসির দায়িত্ব। সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে আমরা ডিসিদের মতোই জেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পেয়েছি। সুতরাং রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিতে তাঁরাই অগ্রাধিকার লাভের যোগ্য। আর ঘাটতি পড়লে প্রশাসন ক্যাডার বাদ দিয়ে অন্যান্য ক্যাডার দিয়েও তা পূরণ করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.