এখনো তাজা শোকের ক্ষত

• ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় অগ্রগতি এক বছরেও হয়নি।
• জামিনে মুক্ত চালক ও সহকারী
খাগড়াছড়ির আলুটিলার আলোক নবগ্রহ ধাতু চৈত্য বৌদ্ধবিহারের পুণ্যার্থীদের ওপর বেপরোয়া চালকের ট্রাক তুলে দেওয়ার ঘটনার প্রথম বর্ষপূর্তি আজ। গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারির এই দিনে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা আটজন পুণ্যার্থী নিহত হন। বছর ঘুরতে চললেও ঘটনার পর পুলিশের দায়ের করা মামলায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন মামলার দুই আসামি চালক ও চালকের সহকারী। এ কারণে হতাশ নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। সেদিনের দুর্ঘটনায় নিহত উচনু মারমা (১৬), নেইম্রা মারমা (৪০), ববি মারমা (১৫), টুনটুনি মারমা (৭), অং ক্যা চিং মারমা (১৬) ও মাথিন মারমা (৭)—এই ছয়জনই জেলার মহালছড়ি উপজেলার চৌংড়াছড়ি গ্রামের বাসিন্দা। নিহত অপর দুজন হলেন রামগড়ের চাথোয়াই মারমা (১৫) ও মাটিরাঙ্গার পলু মারমা (১৬)। আলুটিলা দুর্ঘটনার এক দিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি মাটিরাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক মো. মোজাহের হোসেন বাদী হয়ে ট্রাকচালক মো. পলাশ (৪৫) ও তাঁর সহকারী নুরুজ্জামানের (১৭) বিরুদ্ধে মামলা করেন। দুই আসামিকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ৩০ এপ্রিল খাগড়াছড়ি বিচারিক আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে বলে জানান মাটিরাঙ্গা থানার ওসি সৈয়দ জাকির হোসেন। ঘটনার পর চালক ও সহকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও বর্তমানে তাঁরা জামিনে মুক্ত আছেন। খাগড়াছড়ি আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. আরিফ ইকবাল বলেন, মামলাটি বিচারের জন্য খাগড়াছড়ি মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলায় ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
এ পর্যন্ত তাঁরা আদালতে হাজির হওয়ার কোনো নোটিশ পাননি।  খাগড়াছড়ি সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দুর্গম চৌংড়াছড়ি পাহাড়ি গ্রামের অবস্থান। গ্রামের বাসিন্দারা সবাই মারমা সম্প্রদায়ের। গতকাল শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে শোকাবহ পরিবেশ দেখা গেছে। আজ শনিবার নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে গ্রামে হাজার প্রদীপ প্রজ্বালন, ফানুস ওড়ানো ও ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গ্রামবাসী। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালক জামিনে মুক্তি পেয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ট্রাকচাপায় নিহত উচনু মারমার মা মিপ্রু মারমা বলেন, ছেলেটা নেই, এটা এখনো বিশ্বাস হয় না। দুর্ঘটনার সময় তাঁর ছেলে উচনু এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। অনেক কষ্টে ছেলেটাকে লেখাপড়া শিখিয়ে এতদূর এনেছেন। ঘাতক ট্রাক সব শেষ করে দিল। অথচ এক বছরেও ছেলের হত্যাকারীদের বিচার হয়নি। চৌংড়াছড়ির একটি দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত রনি মারমা (২২) ও চিংলা মং মারমা (১৩)। দুজনের পা ভেঙেছিল। এখনো সেরে ওঠেননি তাঁরা। দুর্ঘটনার সময় রনি মারমা মহালছড়ি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারেনি। সুস্থ হতে তার আরও এক বছর লাগবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.