জানুয়ারির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জানুয়ারি মাসের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই এক মাসেই সারা দেশে ১৯৪ ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সংস্থাটির জেলা, উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর সংবাদের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিবেদন। মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, একই মাসে পরিবহন দুর্ঘটনায় ২৬৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৩২ জন। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি, বছরের প্রথম মাসেই দেশে প্রতিদিন গড়ে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ৭টি। সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। হত্যাকাণ্ডের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি একটি পুরনো বিষয়। কথা হচ্ছে, অবনতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের তাগিদও দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজন, সুশীল সমাজ- প্রতিটি সেক্টর থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর কথা বলা হচ্ছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি পরিস্থিতির উন্নতি তো হচ্ছেই না, বরং কখনও কখনও হত্যাকাণ্ডসহ এমন সব ঘটনা ঘটছে, যা দেখে দেশবাসী বিস্মিত হয়ে পড়ছে। গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, এমনকি শিশু ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে চলেছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে। জনমনে তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই নিয়তি কি অনিবার্য? এসব অকালমৃত্যু ও অপঘটনা কি কোনোভাবেই রোধ করা সম্ভব নয়? এটা ঠিক, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ, রাজধানী ঢাকায়ও দেড় কোটির বেশি লোকের বসবাস। এ ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কে কোথায় কীভাবে অপরাধ সংঘটন করছে, তা নজরে রাখা সহজ কাজ নয়। কিন্তু আমরা মনে করি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল বাড়িয়ে সরকার যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বদ্ধপরিকর হয়, তাহলে কাজটা মোটেও কঠিন হবে না।
আমরা এটাও বুঝতে পারি, অপরাধগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সংঘটিত হয় সরকারি মহলের ছাত্রচ্ছায়ায় থেকে। ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকলে অপরাধীরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহবোধ করে। কাজেই অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয় না দিলে অপরাধ কমে আসতে বাধ্য। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনই শুধু নয়, অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাই বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুম, খুন, অপহরণ ইত্যাদি ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে দেশের ভবমূর্তিও নষ্ট হয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু দেশবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে নয়, বিশ্ব পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করে তা উজ্জ্বল করতেও সরকারকে বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তা না হলে পুরো দেশে বিরাজ করবে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। আমরা অপমৃত্যু, গুম, অপহরণ, ধর্ষণসহ সব অপরাধেরই অবসান চাই এবং এ জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে রাজি নই।

No comments

Powered by Blogger.