ব্যাংকে যাবে পেনশনের টাকা

অবসরে যাওয়া সরকারি চাকরিজীবীরা সরাসরি ব্যাংকে গিয়েই মাসিক পেনশনের টাকা তুলতে পারবেন। এ জন্য বিল নিয়ে আর অফিসে অফিসে তাঁদের ঘুরতে হবে না। এমনকি ঘরে বসেই পেনশনাররা জানতে পারবেন কত টাকা তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হলো। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নতুন একটি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কার্যক্রমটির নাম ‘ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে মাসিক পেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজ হিসাবে জমা।’ ব্যাংক হিসাবে টাকার পরিমাণ উল্লেখসহ পেনশনধারীদের মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা চলে আসবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত পেনশনধারীদের মোবাইল ফোনে গতকাল তাৎক্ষণিকভাবেই এ রকম খুদে বার্তা আসে। নতুন পদ্ধতি চালুর ফলে পেনশনধারীদের সময় বাঁচবে, কমবে ভোগান্তি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং পেনশনে যাওয়া সাবেক অর্থসচিব ও অর্থ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিবেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রউফ তালুকদার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ঢাকার পেনশনভোগীদের পাশাপাশি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর একজন শিক্ষকের জন্যও নতুন পদ্ধতিটি প্রযোজ্য। নতুন পদ্ধতিটিকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কাজটি শুরু করতে পেরে খুবই উৎফুল্ল লাগছে এবং ভালো লাগছে অনেক পুরোনো মুখ দেখে।’ অর্থমন্ত্রী জানান, অবসরে যাওয়ার শুরুতে তিনি ৯০০ টাকা পেনশন পেতেন। এখন পান ৬ হাজার ৪৬৪ টাকা (ভাতা বাদে)। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তিনি রূপরেখাসহ ‘জাতীয় পেনশন কর্মসূচি’ নামক একটি কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম নিজের বোনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার প্রয়াত ভগ্নিপতির পেনশনের টাকার উত্তরাধিকারী আমার বোন।
তিনি তাঁর ছেলেকে নিয়ে অনেক বিড়ম্বনা সহ্য করে টাকা তুলতে যান। এখন থেকে সেই বিড়ম্বনা দূর হলো।’ সিএজি মাসুদ আহমেদ জানান, নতুন পদ্ধতিটি আপাতত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের (সিএও, অর্থ) আওতায় থাকা অবসরভোগীদের দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী জানান, বর্তমানে দেশে পেনশনভোগী আছেন ৬ লাখ ৫৭ লাখ ২১২ জন। আপাতত তাঁদের বিড়ম্বনা দূর করার জন্যই নতুন পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলো। সবার জন্য পেনশনব্যবস্থা চালু করতে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ বা দপ্তর লাগবে বলে জানান অর্থসচিব। সাবেকদের মধ্যে অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, সাবেক সচিব মাহে আলম, অতিরিক্ত সচিব লুৎফুল মতিন ও সৈয়দ আমিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। পেনশনধারীদের বিড়ম্বনার উদাহরণ দিতে গিয়ে সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘একদিন দেখলাম সিঁড়িতে বসে একজন অবসরে যাওয়া নারী কাঁদছেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে জানান, পেনশন তোলার জন্য তাঁকে বলা হয়েছে, যেসব জায়গায় তিনি সারাজীবন চাকরি করেছেন, সেসব জায়গা থেকে “সরকার কোনো টাকা পাবে না” মর্মে অনাপত্তিপত্র নিয়ে আসতে হবে। নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় এ ধরনের বিড়ম্বনা দূর হবে।’ অনুষ্ঠান শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইএফটির মাধ্যমে মাসিক পেনশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাংক হিসাবে জমারবিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। সব পেনশনধারীর জন্য এই প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও এক বছর লাগতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.