ভোট বনাম কোর্ট by ড. আবদুল লতিফ মাসুম

ভোটের দামামা বেজে উঠছে বাংলাদেশে। বলতে গেলে, কোনো ঋতুর আগাম আগমনের মতো। নির্বাচন বা ভোটের এখনো অনেক দেরি; প্রায় এক বছর। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক, এ বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সংবিধানের আজগুবি সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন। সে অনুযায়ী, এই সংসদের মেয়াদ রয়েছে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত। তিন মাস আগে নির্বাচন হলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে হতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যথার্থভাবেই সুবিধাজনক ‘ব্যাসার্ধ’ নিয়েছেন।
ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনে আওয়ামী লীগ ষোলোআনা কৃতিত্ব দাবি করে থাকে। সমালোচকরা বলে থাকেন, জনগণের কৃতিত্বের কাছে তাদের ‘ষোলোআনাই মিছে’ প্রমাণিত হতে পারে। তা অন্য কথা। আমরা বলছিলাম, ভোটের কথা। বিধি অনুযায়ী প্রতিটি নির্বাচনের একটি তফসিল বা সময়সূচি থাকে। এটা ঘোষিত হলেই কেবল নির্বাচনী প্রচার অভিযান শুরু হতে পারে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারাভিযান শুরু করে দিয়েছেন। তাও সরকারি আনুষ্ঠানিকতার সাথে। নির্বাচনী জনসভার আগে ৩৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। সিলেট থেকেই ‘নির্বাচনী প্রচারণা শুরু’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সিলেট এসেছি আপনাদের উপকার করতে। আজ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। সামনে আরো কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হবে, সেগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা শুরু করার বিষয়ে নাগরিক সাধারণ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করে, সমসাময়িক পৃথিবীতে এত আগে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হয়তো আস্থার সঙ্কটে ভুগছেন।
প্রকাশিত কর্মসূচি অনুযায়ী তিনি আগামী এক বছরে বিভাগ, জেলা, নগর, মহানগর চষে বেড়াবেন। দেশের এক ইঞ্চি জমিও তিনি হয়তো অকর্ষিত রাখবেন না। একই সাথে সরকারি কর্মসূচি এবং নির্বাচনী জনসভা করা যায় কিনা- তাও বিবেচ্য বিষয়। নির্বাচন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় Representation of Peoples Order-RPO দিয়ে। নির্বাচনী জনসভা RPO বিধি-বিধান, নির্বাচনী আচরণবিধি এবং প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি বিরোধী। নির্বাচন কমিশন প্রায়ই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ সুবিধার কথা বলে থাকে। সিভিল সোসাইটি এর ব্যতিক্রম হলে বক্তৃতা বিবৃতি দেয়। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই দেখছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট মর্যাদা ব্যবহার করে সরকারি অর্থেই দলীয় প্রচারণা চালাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ভোটের পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করছেন। নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। দেশের কোনো আইন এ কার্যক্রম সমর্থন করে না। অবশ্য দেশে আইনের শাসন আছে বলে মনে হয় না। এটাও অনেক সময়ে বলা হয়, Some are more equal, than the equals। একক কর্তৃত্বের রাষ্ট্রে ব্যক্তিই রাষ্ট্র, ব্যক্তিই আইন। যেমন- ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলতেন, ‘আমিই রাষ্ট্র, আমিই আইন।’ বর্তমান বিশ্বের একক পরাক্রমের অধিকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পও কার্যত ‘রাষ্ট্রপতির আদেশ’ দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন; আইন দিয়ে নয়। অথচ তারা গণতন্ত্রের কথা বলে থাকেন। তত্ত্ব ও বাস্তবে অনেক কিছুতে, অনেক ফারাক। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত টুঁ শব্দটি করেনি। তবে এখনো সময় আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতিশ্রুত কর্তৃত্বে আস্থা রাখতে চাই।
দুই. সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতির’ অঙ্গীকার রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশের ১১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ পদ্ধতিগতভাবে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী সংসদের আস্থাভাজন সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে থাকে। সাধারণত সংখ্যালঘিষ্ঠ দল বিরোধী দলে অবস্থান করে। আইন ও ঐতিহ্য অনুযায়ী, বিরোধী দলকে সরকারের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে এখন যে ব্যবস্থা বিরাজ করছে, তা নির্ণয় করতে রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানীদের গলদঘর্ম হতে হবে। ব্রিটেনে বিরোধী দলকে রাজা বা রানীর নামে বলা হয়, His or Her Majesty's Opposition। বাংলাদেশে অবশ্য এরশাদ আমলে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলের কথা শোনা গিয়েছিল। এখন ‘গৃহপালিত’ শব্দটির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে গৃহপালিত বিরোধী দলের লোকেরা সরকারে আছে। তারা গাছেরটাও খাচ্ছেন, তলারটাও কুড়াচ্ছেন। চরম বিতর্কিত নির্বাচনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে গৃহপালিত বিরোধী দলের উপকারিতা সম্পর্কে সংসদে তারা যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে ‘গাধা ভি হাসব’। সবাই জানে এবং বোঝে, প্রকৃত বিরোধী দল ‘বোগাস সংসদে’ নেই বরং আন্দোলনের ময়দানে আছে। প্রধানমন্ত্রী যখন আগাম নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত, তখন জনগণের বিরোধীদলীয় নেত্রী কী অবস্থায় আছেন, কী করছেন- তা গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনে এসেছে। সরকারি ঘোষিত অঘোষিত এবং সেল্ফ সেন্সর আক্রান্ত গণমাধ্যম। তার পরও সংবাদ আর লুকানো যায় না। পত্রিকায় পাশাপাশি প্রকাশিত দুটো সংবাদ- ‘নৌকায় ভোট দিন’, ‘আদালতে খালেদা জিয়া’।
একটি কার্টুনে দেখা যাচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ফিরিস্তি নিয়ে সাঙ্গপাঙ্গসহ নৌকা মার্কায় ভোট চাইছেন। কার্টুনের অপর অংশে দেখা যাচ্ছে- বৃষ্টি বাদলের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে দুইজনের ওই দিনের রোজনামচা বা দিনের কর্মসূচিও তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রায় একই সময়ে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন ত্যাগ করেন। গন্তব্য কোনো জনসভা বা সমাবেশ নয়, বখশিবাজারে বসানো আদালত। উল্লেখ্য, শুধু তার বিচার করার জন্যই পুরান ঢাকায় এই অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। এখানেই তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলছে। সেদিন যখন আদালতে বেগম জিয়া দণ্ডায়মান, তখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দলের নির্বাচনী কার্যক্রমে ব্যস্ত রয়েছেন। বিএনপি প্রধান ও ২০ দলীয় নেত্রী ওই কোর্টে অভিযোগ করেন, ‘মামলাটি অসৎ উদ্দেশ্যে তাকে রাজনীতি থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং আসন্ন নির্বাচনে অনুপযুক্ত ঘোষণার জন্য করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আদালতে আরো বলেছেন, সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের কার্যকলাপ এবং তাদের বক্তৃতা বিবৃতি এর স্পষ্ট প্রমাণ। আর সে জন্যই জনগণের মারাত্মক সন্দেহ রয়েছে ন্যায়বিচার পাওয়া সম্পর্কে। সকাল থেকে দীর্ঘ অবস্থানের পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বখশিবাজারে অবস্থিত আলিয়া মাদরাসা মাঠ ত্যাগ করেন তিনি। ঠিক তখন সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেত্রী বক্তৃতা করছিলেন জনসভার। প্রধানমন্ত্রী ওই দিনই ঢাকা ফিরে আসেন। রাতে তিনি আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হলো। অপর দিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হয়তো তার বিরুদ্ধে পরিচালিত মামলাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটান। বর্তমানে তিনি ৩২টি মামলার মোকাবেলা করছেন। একই মামলায় তিনি পরদিন একইভাবে হাজিরা দিলেন।
তিন. প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পরিচালিত সিরিজ মামলার একটির রায় ঘোষিত হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। আওয়ামী লীগ নেতারা ইতোমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি সম্পর্কে আগাম কথাবার্তা বলছেন। বহুলালোচিত নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, খালেদা জিয়ার সাজা নিশ্চিত। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, খালেদা জিয়াকে একদিনের জন্য হলেও জেলে যেতে হবে। পতিত স্বৈরাচারী এরশাদ বলেছেন, খালেদা জিয়া শিগগিরই জেলে যাবেন। এমনকি রাষ্ট্রের আইনের রক্ষক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আগাম বলে দিয়েছেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে আপিল করতে হবে।’ সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, রায় কী হবে! স্বাভাবিকভাবে বিএনপি এবং বিরোধীদলীয় জোটে এ নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে। বেগম জিয়ার কিছু হলে তা হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী। চিরায়ত সত্য কথা এই যে, নিপীড়কের পরাজয় অবধারিত। ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়া ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির থাকবেন। ওই দিন দেশব্যাপী নির্বাচনী সফরের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল সফর করবেন। সেখানে তিনি অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। বিকেলে তিনি নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা করবেন। নিশ্চিতভাবেই তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাইবেন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে আরো জানা গেছে, জুলাই মাসের আগে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুর, রাজশাহী এবং খুলনা সফর করবেন। উল্লেখ্য, এ বছরের মাঝামাঝি গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ কর্মসূচির পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দেশব্যাপী ব্যাপক সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। অপর দিকে, একই সময়ে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী জেলে আছেন। ৩০ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২৯ জানুয়ারি দলের তরুণ নেতা আনিসুর রহমান খোকনকে গ্রেফতার করা হয়। হঠাৎ ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এবং জেলা শহরগুলো থেকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীসমেত ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। মনে করা হচ্ছে, ৮ ফেব্রুয়ারির মামলার রায় উপলক্ষে এসব ধরপাকড় চলছে। বিগত প্রায় এক দশক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা নিত্যনিয়ত হত্যা, গুম, হামলা, মামলা ও নিপীড়ন নির্যাতনের মোকাবেলা করে আসছেন।
চার. উপরিউক্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তথা তুলনামূলক আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট, সমতা ও ন্যায়বিচার থেকে একপক্ষ বঞ্চিত হচ্ছে; অপরপক্ষ নিয়ম-কানুন রীতিনীতি, ভদ্রতা, ভব্যতা -কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে বেপরোয়াভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের মতো এবার যাতে আগাম উৎসাহের ঘটনা না ঘটে সেজন্যও ক্ষমতাসীন দল সতর্ক রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। মূলত কৌশলগতভাবে ওই বিরাট বিজয় বিএনপির জন্য এক ধরনের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন থেকেই শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য ন্যায়নীতি ও গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে নির্বাচনকে অকার্যকর করে তুলছে। এ লক্ষ্যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান সংবিধান থেকে বিলোপ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। ১৫৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তখন ক্ষমতাসীন দল বহির্বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এবার তারা সে বদনাম ঘুচাতে চায়। কৌশলটি হচ্ছে- বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে এবং ‘আনন্দের সাথে’ পরাজয় বরণ করতে হবে। জনশ্রুতি আছে, অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগের রণকুশলীরা বিএনপি নেতৃত্বকে উপদেশ খয়রাত করে আসছেন, তারা যেন গৃহপালিত বিরোধী দল হন। বিএনপি ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করায় তাদের মাথায় বাজ পড়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি নেতৃত্বকে কারাগারে নিক্ষেপ এবং নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করে মতলব হাসিল করতে চায়। দেশে ক্ষমতাসীন দলের একমাত্র চ্যালেঞ্জ জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারলে তাদের গদি নিরাপদ হবে মনে করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করা হয়েছে সর্বত্র। মাইনাস ওয়ান ফর্মুলার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী, তারেক রহমানকে স্থায়ীভাবে দেশত্যাগী এবং বিএনপিকে বিভক্ত করে গতবারের মতো করার কুমতলব আঁটা হচ্ছে। কিন্তু অতীতে যেমন ষড়যন্ত্র সফল হয়নি, এবারো তা হবে না। জনগণই যদি ক্ষমতার উৎস হয় তাহলে আগামী নির্বাচন হয়ে উঠতে পারে গণবিপ্লব। ‘মুক্তি অথবা মৃত্যু’- এই হোক জনতার অঙ্গীকার।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.