সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন

২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয়সম্পন্ন সব বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে বাধ্যতামূলক সম্ভাব্যতা যাচাই করার সরকারি বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই বিধান পালন না করে কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই বা জরিপ ছাড়াই শুধু ইন হাউজ স্ট্যাডি করে বিদ্যুৎ খাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের প্রকল্প অনুমোদন ও দরপত্র আহ্বান কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে আপত্তি জানিয়েছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। ঘটনাটি বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং বরগুনা ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে এ প্রক্রিয়া চলছে বলে কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার অনির্ভরযোগ্য ৩৩ কেভি পাওয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চলছে বরগুনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। যার ফলে সেখানে গুরুতর বিদ্যুৎ সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমানে বরগুনার ভাণ্ডারিয়া উপকেন্দ্র থেকে ৩৩ কেভি ফিডার লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টিসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩৩ কেভি লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এই সঙ্কট উত্তরণের জন্য ১৪৩ কোটি ১৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন এবং বরগুনা ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে তা পরিকল্পনা কমিশনের কাছে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। পিইসি সভায় পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে, প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা জরিপের পরিবর্তে ইন-হাউজ স্ট্যাডি করা হলেও এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও তথ্যবহুল নয়। এ ছাড়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের মতো জটিল ও ব্যয়বহুল একটি প্রকল্পে সম্ভাব্যতা জরিপ সম্পাদন না করেই প্রকল্প অনুমোদন এবং দরপত্র আহ্বান কার্যক্রম শুরু করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। কারণ সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্রের ৪.১ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে প্রাক্কলিত ব্যয়সম্পন্ন সকল বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এ দিকে সভায় ভূমির মূল্য প্রসঙ্গে জানানো হয়, ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অর্থ বাজারদর থেকে যথেষ্ট কম বিধায় প্রকল্প বাস্তবায়নকালে স্থানীয় জনগণের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই প্রকল্পে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি। তাই ৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য জমির মূল্য ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা বরগুনায় ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া ৫০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রশ্ন তোলা হয় যে,
বিদ্যুৎ বিভাগের একটি অনুমোদিত রেট শিডিউল রয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে সেই রেট শিডিউল ব্যবহার না করার কারণ কী? জবাবে সংস্থাটি জানায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের আওতায় সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ আন্তর্জাতিক ওপেন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় টার্ন-কী চুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এ কারণে এই প্রকল্পে ওই রেট শিডিউল ব্যবহার না করে সমসাময়িক প্রকল্পের সমজাতীয় কাজের অনুমোদিত দরপত্রকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এ দিকে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ব্যাপারে বাস্তাবয়নকারী সংস্থা পিজিসিবি বলছে, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করে প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তাব করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বর্তমানে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খসড়া প্রতিবেদন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে এসেছে। প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনা করে অনুমোদন করে বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত শুরুর স্বার্থে চলমান সম্ভাব্যতা যাচাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই ইন হাউজ স্ট্যাডি অন্তর্ভুক্ত করে ডিপিপি অনুমোদনের প্রক্রিয়া করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনার কর্মপরিকল্পনায় বিডিং প্রসেস বা দরপত্র প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তারা এও বলেছেন, প্রকল্পের লগফ্রেম আরো সঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীত যন্ত্রপাতি ও মেশিনারিজ সঠিকভাবে বুঝে পাওয়া গেছে কি না তা সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রাপ্তি সনদ সংরক্ষণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.