সরকারের অবস্থান ১৬ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে : ফখরুল

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে মন্ত্রিসভার ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সোমবার মন্ত্রিসভায় কয়েকটা মন্তব্য করা হয়েছে এ রায় (ষোড়শ সংশোধনী বাতিল) সম্পর্কে, যেটা সত্যিই উদ্বেগজনক। যেখানে আমাদের সবার আশা-ভরসার শেষস্থল বিচার বিভাগ-আপিল বিভাগ, সেখান থেকে যখন একটা রায় আসে, কিছু পর্যবেক্ষণ আসে, তখন পুরো জাতি মেনে নেয় শুধু নয়, তারা সেটাকে মানতে চেষ্টা করে। সেখানে তারা (ক্ষমতাসীনরা) বলছেন, জনমত তৈরি করবেন। কার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করবেন? এই ১৬ কোটি মানুষের মনের যে চিন্তাভাবনা যে রায়ের মধ্য দিয়ে এসেছে, যে পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করবেন। জনগণ আপনাদের সঙ্গে থাকবে না। জনগণ আপনাদের সঙ্গে নেই বলেই আপনারা এমন কথা বলছেন। মঙ্গলবার বিকালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি উদ্বোধনকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সুপ্রিমকোর্টের দেয়া ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, এ সরকারের নৈতিক কোনো অধিকার নেই ক্ষমতায় থাকার। কারণ যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা সরকার দাবি করেন, সেই নির্বাচন তো হয়নি। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এমনকি এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে যাননি। এ দেশের মানুষ জানে, বিশ্বের মানুষও তেমন জানে, এটা একটা কারচুপি ও ভুল নির্বাচন হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তাকে অত্যন্ত সজ্জন মানুষ হিসেবে জানি। আর ইদানীং খুব সন্দুর সুন্দর কথা বলছেন। তার কথায় আমরা সবাই বেশ আমোদ পাই। উনি (ওবায়দুল কাদের) সোমবার বলেছেন, বিএনপি নাকি আদালত আর বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমি বলতে চাই, কার কথা কে বলে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই খায়রুল হকের (সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক) রায়ের ওপরে আপনারা ক্ষমতায় টিকে আছেন। এদেশের সব মানুষ জানে, কোন বিদেশিদের কর্মতৎপরতায় আপনারা ক্ষমতায় টিকে আছেন। সুতরাং বিএনপিকে এ কথা বলবেন না। বিএনপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে জনগণ। যতবার বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, অন্য কোনো পথে বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি, বিএনপি অন্য কারও সঙ্গে আঁতাত করে, অন্য কারও সঙ্গে সমঝোতা করে বা রাতের অন্ধকারে বিএনপি ক্ষমতায় আসেনি।বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবং জনগণের সরকার গঠন করেছে। দেশে এখন ‘দুঃসময়’ চলছে- এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজ কথা নেই, বার্তা নেই, মানুষকে তুলে নিয়ে যায়, গুম করে দেয়। ফরহাদ মজহারের মতো মানুষকে তুলে নিয়ে যায়, ইলিয়াস আলীর মতো নেতার আমরা খোঁজ পাই না। হাজার হাজার তরুণকে তারা হত্যা করেছে, শতাধিক মানুষকে তারা গুম করেছে, জোর করে তুলে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৭৪ হাজার। ১০ লাখের ওপরে আমাদের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। আমরা জরিপ করাচ্ছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, একটি কথা আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে- এ সরকার এমনি এমনি ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। এ সরকারকে বাধ্য করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হতে হবে। অন্যথায় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। লড়াই করে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। সহায়ক সরকার সংবিধানে নেই- ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, আপনারা যখন কেয়ারটেকারের দাবি তুলেছিলেন, তখন কি তা সংবিধানে ছিল। তখন তা ছিল না। শাহাবুদ্দিন আহমেদকে যখন আনা হল, তখন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ উপরাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার জায়গায় শাহবুদ্দিনকে নিয়ে আসা হল। তখন তো এগুলো সংবিধানে ছিল না। মূল বিষয়টা কী? জনগণ যা চায়, সেই প্রয়োজনের পরিবর্তনগুলো আনতে হবে। সংবিধান কোনো বাইবেল নয়। দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ‘ব্যাপক সাড়া’ পাওয়া যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, আমি মর্মাহত হয়েছি। আজ সব কাগজে দেখলাম, আমাদের ষোড়শ সংশোধনীর ওপরে সুপ্রিমকোর্ট যে ঐতিহাসিক যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন, এ রায়ের ওপরে মন্ত্রিসভা আলোচনা করেছে। সেখানে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং আরও আমি আতঙ্কিতবোধ করছি, কারণ তারা বলেছেন, তারা জনমত সৃষ্ট করবেন। বাংলাদেশে তারা (ক্ষমতাসীনরা) জনমত সৃষ্টি করবেন এ রায়ের বিরুদ্ধে। মানে কী? এর মানে হল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তারা জনমত সৃষ্টি করতে চান।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে দুই বছর সরকার এক্সটেনশন দিয়েছে উইথ আউট কনসালটেশন অব চিফ জাস্টিস। আজ এজে মোহাম্মদ আলী রিট ফাইল করে এসেছেন। তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আর থাকল কোথায়? তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখে অর্থমন্ত্রী আদালত অবমাননা করেছেন। আমরা বলতে চাই, তিন দিনের মধ্যে অর্থমন্ত্রীকে মাফ চাইতে হবে। নইলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, অর্থমন্ত্রী রাবিশ মন্ত্রী, গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সুয়েমোটোর মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হোক। তিনি ?জুডিশিয়ারিকে অপমান করেছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আমীনুল হক, আহমেদ আজম খান ও নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মীর মোহাম্মদ নাছির, এজে মোহাম্মদ আলীসহ সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.