চীন-ভারত যুদ্ধ অনিবার্য

ভুটানের ডোকলাম উপত্যকা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতকে ফের যুদ্ধের হুমকি দিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস। ১৯৬২ সালের জওহরলাল নেহরু সরকারের মতো বর্তমানের নরেন্দ্র মোদি সরকার চীনের হুমকিকে ‘হাস্যরস’ হিসেবে নিচ্ছে বলে দাবি পত্রিকাটির। মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয় প্রধান হু জিজিন তার লিখিত এক সম্পাদকীয়র সঙ্গে দুই মিনিটের একটি ভিডিও সংযুক্ত করে দেন। টুইটারে সহজলভ্য এ ভিডিওটিতে হু জিজিনের মাধ্যমে ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা না সরানো হলে চীনের করণীয় কি হবে সে বার্তা দেয়া হয়েছে। খবর ইন্ডিয়া টুডের। সম্পাদকীয়তে জিজিন তার বিশ্বাসের কথা তুলে ধরে বলেন, যদি ভারত বারবার চীনের হুমকিকে উপেক্ষা করে চলে তবে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ও অনিবার্য হয়ে উঠবে। ‘চীন অবশ্যই যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে চায় না’- এ বাক্য দিয়েই ওই সম্পাদকীয় শুরু করা হয়েছে। তবে বলা হয়েছে, ডোকলাম উপত্যকায় ভারত যদি তাদের সেনা সরিয়ে না নেয় তাহলে চীন ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ নিতে বাধ্য হবে। চীন, ভারত ও ভুটানের সংযোগস্থলে ডোকলাম এলাকা নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা চলছে। উভয় দেশই পাল্টাপাল্টি হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা প্রতিদিনই ভারতকে যুদ্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকি দিচ্ছে। মঙ্গলবারের নিবন্ধেও এ ব্যতিক্রম হয়নি। নিবন্ধে বলা হয়, ‘১৯৬২ সালের ইন্দো-চীন যুদ্ধে ভারত অপমানজনক পরাজয়ের মুখে পড়ে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত সীমান্তে ভারত ক্রমাগত উত্তেজনা তৈরি করেছিল। সে সময় জওহরলাল নেহরুর সরকার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিল যে, চীন পিছু হটবে না।’ নিবন্ধে আরও বলা হয়, ‘নেহরু সরকার চীনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা সুরক্ষার ক্ষেত্রে চীনা সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে অবজ্ঞা করেছিল। এমনকি দেশটি দেশি ও কূটনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ‘নর্দমার কাদায়’ পড়ে গিয়েছিল। তখনকার মতো বর্তমান মোদি সরকারও চীনের হুমকি অবজ্ঞা করছে। ৫৫ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু ভারত সরকার আগের মতোই ‘আনাড়ি’ রয়ে গেছে।
১৯৬২ সালের যুদ্ধটির অধ্যায় অর্ধশতকের জন্য শেষ হয়নি।’ তবে এ নিবন্ধে ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যরা চীনকে পরাজিত করতে পেরেছিল কিনা সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলা হয়নি। ‘কথার লড়াই সর্বনাশ ডেকে আনবে’ : চীনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসুর প্রপৌত্র তথা লোকসভার সংসদ সদস্য সুগত বসু বলেন, দু’দেশের মধ্যে কথার লড়াই উভয়ের জন্য সর্বনাশের কারণ হিসেবে দেখা দেবে। তিনি জানান, ‘বিশ্বে ভারত ও চীন একসঙ্গে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। এই দুটি দেশ যাতে যুদ্ধের দিকে না যায়, সেটা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে চীনের আগ্রাসী মনোভাব শোনা যাচ্ছে। বসু আরও বলেন, আমার মনে হয়, এখন ভারতের পক্ষ থেকে ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থান নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে ভারত-?চীন সম্পর্ক শুধু ডোকলামে কী হচ্ছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে নেই।’ গ্লোবাল টাইমসের নিবন্ধে চীনা বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন, ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনাকে হটাতে দু’সপ্তাহের মধ্যে চীন ছোট মাপের ‘মিলিটারি অপারেশন’ চালাতে যেতে পারে। গোটা পরিস্থিতির জন্য মোদির দিকেই আঙুল তুলে বলা হয়েছে, মোদি চীনের প্রতি কড়া অবস্থান নিতে গিয়ে নিজের দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.