জামিনে মুক্তি পেয়েছেন যুগান্তরের ইকোনমিক এডিটর হেলাল উদ্দিন

দৈনিক যুগান্তরের ইকোনমিক এডিটর হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার সকালে কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। দুর্নীতি, প্রতারণা, অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে চূড়ান্ত বরখাস্ত হওয়া ঢাকা কাস্টমসের সাবেক বন্ড কমিশনার এম হাফিজুর রহমানের দায়ের করা এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। উচ্চ আদালতের ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করা হলে গত ২০ জুলাই বিচারক কামরুল ইসলাম মোল্লা জামিন আবেদন বাতিল করে হেলাল উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকেই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন সিনিয়র সাংবাদিক হেলাল উদ্দিনের মুক্তি ও মিথ্য মামলা প্রত্যাহারের  দাবি করে আসছিল।   এদিকে হেলাল উদ্দিনের পক্ষে করা এক জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত রোববার সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ হেলাল উদ্দিনকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
একই সঙ্গে এ হয়রানিমূলক মামলায় কেন তাকে স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে আদালত রুল জারি করেছেন। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে মামলার বাদী পক্ষকে এর জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হেলাল উদ্দিনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করীম। দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কাস্টমস কমিশনার হাফিজুর রহমানের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি, প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একাধিক তদন্তে এম হাফিজুর রহমান ওরফে রাজুর বিরুদ্ধে অনৈতিক কার্যকলাপ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দুর্র্নীতিসহ অসংখ্য গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তাকে অতিরিক্ত কমিশনার পদে পদাবনতি দিয়ে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হয়। একাধিক তদন্তে দেশে-বিদেশে হাফিজুর রহমান, তার স্ত্রী এবং ছেলের নামে-বেনামে বিপুল অংকের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থে হাফিজুর রহমান ঘটনার দুই বছর পর ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানায় বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন এবং সুস্মিতা গোলাম নামে এক নারীকে আসামি করে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশের সিআইডির উচ্চপর্যায়ে দীর্ঘ তদন্ত করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত বছর আদালতে সিআইডির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। কিন্তু ঢাকার বিশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনালের জজ বাদী এবং বাদীর আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে, বাদীর কোনো নারাজি পিটিশন ছাড়াই মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিসিএ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপর কয়েক মাসের তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা বাদীর অবৈধ অর্থের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ক্রটিপূর্ণ ও ভিত্তিহীন একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। কিন্তু ঢাকার বিশেষ সাইবার ট্রাইব্যুনাল সিসিএ’র প্রতিবেদনটি অগ্রাহ্য (জবলবপঃ) করেন। এরপর ভাটারা থানাকে আইটি বিশেষজ্ঞ রিপোর্টসহ মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। কিন্তু ভাটারা থানার পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের কোনো বক্তব্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই আইটি বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়ার আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বাদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মাত্র ২২ দিনের মাথায় নজিরবিহীনভাবে একটি মামলায় দুটি চার্জশিট প্রদান করেন। এর একটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এবং অপরটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৮(২) ধারা। এতে প্রধান আসামি করা হয় সুস্মিতা গোলাম নামে এক উচ্চশিক্ষিত নারীকে। যিনি প্রায় দুই বছর আগেই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন, যা বর্তমানে মহানগর দায়রা জজ আদালতেই বিচারাধীন।

No comments

Powered by Blogger.