ঈদের আগেই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ: সম্ভাব্য নাম যুক্তফ্রন্ট

ঈদের আগেই দেশের রাজনীতিতে আরও একটি জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি রাজনৈতিক দল মিলে গঠিত হচ্ছে এ জোট। দলগুলো হচ্ছে- সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর (বি. চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং সাবেক ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। দলগুলোর শীর্ষ নেতারা যুগান্তরের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নেতারা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের যে কোনোদিন বৈঠকে বসবেন বি. চৌধুরী এবং ড. কামাল হোসেন। বাকি তিন দলের শীর্ষ নেতারাও এ সময় উপস্থিত থাকবেন। ঈদুল আজহার আগে যাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন জোটের ঘোষণা দেয়া যায়- তা মাথায় রেখেই যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। এ মুহূর্তে জোটের নাম চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এর লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য প্রণয়নের কাজ চলছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা। এর পরপরই নিজেদের মধ্যে আরেক দফা বৈঠকে বসবেন। আর এ বৈঠকেই নয়া জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হবে বলেও তারা জানান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মানুষ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিএনপি-জামায়াত অনেক আগেই জনগণের কাছে পরিত্যক্ত হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও জনগণ নেই। তারা জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে হেফাজতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। গায়ের জোরে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে। দেশবাসীকে দুঃশাসন উপহার দিয়েছে। এ অবস্থায় বিকল্প শক্তির উত্থান জরুরি। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই আমরা আপাতত পাঁচটি রাজনৈতিক দল মিলে নতুন একটি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি ঈদের আগেই এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি কিছু একটা করার এখনই প্রাইম টাইম (উপযুক্ত সময়)। দুই দল ও জোট যেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ সেখানে আমরা কিছু একটা করতে পারি। আমাদের সামনে এখন গোল্ডেন অপরচুনিটি (সুবর্ণ সুযোগ) অপেক্ষা করছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’ অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শীর্ষ নেতাদের পরিচিতি আছে, গ্রহণযোগ্যতা আছে। হাতে আরও এক বছর সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে সারা দেশ সফর করে জনমত গড়ে তুলতে পারলে, মানুষের মধ্যে আস্থা জাগাতে পারলে আমরাই হব মূল শক্তি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়।’
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এই জোটের নাম যুক্তফ্রন্ট রাখার কথা ভাবছেন এর উদ্যোক্তারা। এর বাইরে আরও কয়েকটি নামও রয়েছে তাদের আলোচনার টেবিলে। জোটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোট অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশ করতে দেয়াসহ সব ধরনের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, দমন-পীড়ন বন্ধ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, কালো টাকার মালিক ও ঋণখেলাপিদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন, আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ বন্ধ করা ইত্যাদি। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা চালাবে এ জোট। আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের পর জোটের শীর্ষ নেতারা সারা দেশ সফরে বের হবেন, জোটের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি তারা একসঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলন এবং একসঙ্গে নির্বাচনেও অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপদ কর্মসূচি দিয়েও রাজপথে থাকবে জোটের শরিকরা। বামদলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের পথও খোলা রাখছেন এর উদ্যোক্তারা। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশে একটি তৃতীয় বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার জন্য আমরা সমমনা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জোট গঠনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মধ্যেই আমরা বৈঠকে বসছি। আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আসম আবদুর রব এবং বি. চৌধুরীর বাসায় পরপর দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে জোট গঠনের বিষয়ে অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। অচিরেই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসবে বলে আশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পাঁচটি দল এ জোটে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ঈদের আগেই জোটের বিষয়টি জানান দিতে।’

No comments

Powered by Blogger.