মুক্তামনি কেমন আছে

অস্ত্রোপচারের পর বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মুক্তামনির ড্রেসিং সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার সকালে মুক্তামনির ড্রেসিং করা হয়। ড্রেসিং করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম ও সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন। এ বিষয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, ড্রেসিংয়ের সময় মুক্তামনিকে রক্ত দেয়া হয়েছে। এখন সে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) আছে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো। গত শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মুক্তামনির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।  সে সময় টিউমারের মতো দেখতে তার হাতের বাড়তি অংশ কেটে ফেলা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে দ্বিতীয় তলার আইসিইউর ৫ নম্বর কেবিনে রাখা হয়। গত ৫ আগস্ট সকালে মুক্তামনির ডান হাতের বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়। এর পর ৮ আগস্ট মুক্তামনির চিকিৎসার জন্য গঠিত ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার বায়োপসি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়। গত মাসে সাতক্ষীরা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুটির খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার খরচ বহনের কথা জানান। মুক্তামনিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকরা টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমের তাঁর শরীরের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা এ ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারে করতে আগ্রহী নন বলে জানান। তখন ঢামেকের চিকিৎসকরাই সাহস করে মুক্তামনির অস্ত্রোপচারে এগিয়ে আসেন। মুক্তামনি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে। তার এখন ১২ বছর বয়স। ছয় মাস বয়সে তার ডান হাতে একটি গোটা দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সেটি তার হাত থেকে বড় হয়ে যায়। ফলে চলাফেরা করতে সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় তিন বছর ধরে সে বিছানায় ছিল। বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনিকে সরকারি উদ্যোগে গতমাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান তখন জানান, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এজন্য আট সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। শিশু মুক্তামনির বাবা সাতক্ষীরার সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেন। ঢাকায় অবস্থানরত শিশু মুক্তার মা আয়েশা খাতুন মেয়েকে ভর্তির পর জানিয়েছিলেন, ডা. সামন্তলাল তাদের মেয়ের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন। বর্তমানে তার রক্তশূন্য দেহে রক্ত দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উন্নত মানের খাবার খাইয়ে তাকে সুস্থ করে তুলবার পর মূল চিকিৎসা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডাক্তার। এখন মেয়ের রোগমুক্তি নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন মুক্তামনির মা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুধু অবহেলার কারণেই আজ মুক্তামনির করুণ পরিণতি। তবে মুক্তামনি দ্রুত সেরে উঠবেন বলে জানান ডা. সামন্তলাল সেন। শিশুটির চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। শিশুটির এমন অবস্থার জন্য শুধু অবহেলাকেই দায়ী করেন চিকিৎসক। খুলনার আবুল বাজানদারের মতো মুক্তামনিও সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে জানান চিকিৎসক। উল্লেখ্য, ১২ বছরের শিশু মুক্তামনির দেহে জন্মের দেড় বছর পর একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। তার আক্রান্ত ডানহাত এখন ছোট আকারের গাছের গুড়ির রূপ নিয়ে প্রচণ্ড ভারি হয়ে উঠেছে। এতে পচন ধরেছে। পোকাও জন্মেছে। দিন রাত চুলকানি ও যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে থাকে মুক্তামনি। আক্রান্ত স্থান থেকে বিকট গন্ধ ছুটছে। এ রোগ তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। সম্প্রতি মুক্তামনির এই বিরল রোগ নিয়ে ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
মুক্তামনি ভালো আছে
সফল অস্ত্রোপচারের পর বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনি এখন ভালো আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন মুক্তামনি রোববার তার মা-বাবা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছে। ঐদ্নি সকাল থেকে তাকে স্যুপ জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মুক্তামনি ভালো আছে। তার সঙ্গে অনেক সময় কথা হয়েছে। টিউমার অপসারণের কারণে ডান হাত হালকা অনুভব করছে বলে সে জানিয়েছে। সকালের দিকে ক্ষুধা লাগার কথাও জানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্যুপ জাতীয় খাবার দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে তাকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হয়। এর আগে গত শনিবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে মুক্তামনির ডান হাতের টিউমার অপসারণ করা হয়। পরে চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, টিউমার মুক্তামনির শরীরের অনেক জায়গায় ছড়িয়েছে। প্রথম অস্ত্রোপচারে হাতের অংশে থাকা টিউমারটি অপসারণ করা হয়েছে। অন্য টিউমারগুলো অপসারণ করতে আরও পাঁচ থেকে ছয়টি অস্ত্রোপচার লাগবে। ফুসফুসসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা থাকার কারণে তাকে এখনই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.