চীন-ভারত বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু

ডোকলাম নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা এবার বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে ৯৩টি চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক (অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি) বসিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। সোমবার চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে এ নিয়ে ভারতকে হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। ভারতের এ ধরনের ‘দুর্বল সিদ্ধান্তের’ জন্য দেশটিকে ভয়াবহ ফল ভোগ করতে প্রস্তুত থাকতে বলেছে চীন। এছাড়া চীনা কোম্পানিগুলোকেও এখন ভারতে বিনিয়োগের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ইকোনমিক টাইমসের। কমিউনিস্ট সরকারের মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দিল্লির এ পদক্ষেপের জবাব অনায়াসে দিতে পারে তারা। পাল্টা দেয়াল তুলতে পারে ভারতীয় রফতানির সামনে। ভারত যদি সত্যিই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ঠিকই; কিন্তু এর জন্য দিল্লিকে অবশ্যই চরম মূল্য দিতে হবে।’ যেসব চীনা কোম্পানি ভারতের মাটিতে কিংবা ভারতীয় কোম্পানিতে লগ্নি করেছে বা করতে উদ্যোগী, তাদেরও সাবধান করেছে বেইজিং। এ বিষয়ে ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে পরামর্শ দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে এভাবে দেয়াল তুললে ভারতীয় অর্থনীতিরই ক্ষতি হবে। উদাহরণ হিসেবে চীনা মোবাইল ফোন সংস্থার কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, ভারত যদি চীনা মোবাইল ফোন ভারতে ঢুকতে না দেয় কিংবা চীনা কোম্পানির কারখানায় তৈরি মোবাইল ফোন বিক্রির পথে বাধা দেয়, তবে ভুগতে হবে এ দেশের অর্থনীতিকেই। কাজ খোয়াবেন ভারতীয় কর্মীরা। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উৎপাদন খরচ থেকেও কম দামে পণ্য সরবরাহের অভিযোগে ইস্পাতসহ বিভিন্ন চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছে ভারত। কিন্তু তখন বেইজিং উষ্মা প্রকাশ করলেও এত কড়া সুরে হুশিয়ারি দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোকলামে দুই প্রতিবেশীর সামরিক উত্তেজনার কারণেই সুর এত চড়া। ভারতীয় অর্থনীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতের পণ্য রফতানি ১২.৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৫ কোটি ডলার। অথচ শুধু চীন থেকেই ভারতের আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের তুলনায় চীনের রফতানি প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বেশি। ফলে যুদ্ধের জিগিরে ভারতের এ বিপুল সম্ভাবনাময় বাজার কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না চীন। তাদের তরফে আগাম হুশিয়ারি কিছুটা সেই কারণেও। ডোকলামে বৃষ্টিতে কমেছে দুই দেশের সেনা : চীন, ভারত ও ভুটানের সংযোগস্থল ডোকলামে টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে কমেছে বেইজিং ও দিল্লির সেনা সদস্য। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্রের দাবি, ডোকলামে বিতর্কিত এলাকা থেকে ভারত এবং চীন অধিকাংশ সেনা সরিয়ে নিয়েছে। উভয় পক্ষেরই ১০-১২ জন করে সেনা সেখানে রয়েছেন। আশপাশের বাঙ্কারে আরও কিছু সেনা আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা। বৃষ্টি, ঠাণ্ডা হাওয়া এবং তুষারপাতের মধ্যে জওয়ানরা তিন-চার ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। উভয়পক্ষই বারবার সেনা বদলে শুধু বিতর্কিত এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখছে বলে সেনা সূত্রে জানা গেছে। একসময় উভয়পক্ষেরই চারশ’র কাছাকাছি জওয়ান সেখানে ছিলেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে চীনা ফৌজ বিতর্কিত এলাকা থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেও পুরোপুরি সরে গেছে বলে মনে করছেন না ভারতীয় সেনা কর্মকর্তারা। তাদের মতে, কাছাকাছি কোথাও নিরাপদ আশ্রয়ে লুকিয়ে রয়েছে চীনা বাহিনীর বড় অংশ। আবহাওয়ার উন্নতি হলে ফের তারা আবার ফিরবেন বলে মনে করছেন সেনা কর্মকর্তারা। এক সেনা কর্মকর্তার দাবি, ‘যদি আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ার পরও চিনা বাহিনী সেনার সংখ্যা না বাড়ায় তবে তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ভারতও সেক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’ শান্তি নয়, যুদ্ধ চান রামদেব : চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্তির মাধ্যমে নয়, বরং যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের আরএসএস ঘনিষ্ঠ যোগগুরু বাবা রামদেব। সোমবার টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারত বারবার শান্তির বার্তা দিয়ে এসেছে, কিন্তু চীন যুদ্ধের হুমকি দিয়ে এসেছে। চীন শান্তির ভাষা বোঝে না। যে যেরকম করে, তাকে সেই ভাষাতেই জবাব দেয়া উচিত।’ চীনা পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে রামদেব বলেন, ‘প্রত্যেক ভারতীয় চান, শিগগিরই চীনের পণ্য বয়কট করা হোক। তাহলে আমরা খুব সহজেই চীনের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারি এবং ‘সুপার পাওয়ার’ হতে পারি।’ যুদ্ধে কেউ জিততে পারবে না -দালাইলামা : ভারত ও চীন যুদ্ধে জড়ালে কোনো পক্ষই জিততে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিব্বতীয় ধর্মগুরু দালাইলামা। সোমবার ভারতের মুম্বাইয়ের এক কর্মসূচিতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন তিনি। দালাইলামা বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্তের যা পরিস্থিতি, তাতে ভারত বা চীন কেউই কাউকে হারাতে পারবে না। দুই দেশই সামরিকভাবে শক্তিশালী।’ পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, সীমান্তে ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে, হয়তো গোলাগুলিও চলতে পারে, কিন্তু তার জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা উচিত হবে না এ দুই বৃহৎ শক্তির। দালাইলামা বলেন, ধর্মের বন্ধনেই এ দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ। আমাদের বুঝতে হবে, চীনের বৌদ্ধরা আসলে সেই ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মকেই অনুসরণ করছেন, যে ধর্ম নালন্দা থেকে এবং সংস্কৃত থেকে এসেছে। তিনি বলেন, ভারতের উচিত চীনের মানুষের জন্য তীর্থযাত্রার ব্যবস্থা করা। এতে তারা মানসিকভাবে ভারতের আরও কাছাকাছি আসতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.