পদস্থ কর্মকর্তার ঘুষের দরবার

অতিরিক্ত সচিব সালাউদ্দিন মাহমুদ বললেন, ‘আমি শিগগির খাদ্য মন্ত্রণালয় বা অন্য কোথাও ভালো পোস্টিং পাব। তখন তোমাদের সব টাকা ফেরত দিয়ে দেব’ সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তার ঘুষ কেলেংকারি অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। ঘুষ নেয়া তার কাছে একেবারে মামুলি বিষয়। কোনো রাখঢাক নেই। অবলীলায় তিনি ঘুষ নিয়ে দরকষাকষি করেন। কিন্তু হঠাৎ ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হওয়ায় খানিকটা বেকায়দায় পড়েছেন। মোটা অঙ্কের ঘুষ নেয়ার পরও তিনি যাদের কাজ করে দিতে পারেননি তারা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনিও কম যাননি। মোবাইল ফোন বন্ধ করে একরকম লাপাত্তা। কিন্তু ভুক্তভোগীরাও নাছোড়বান্দা। বাসার ঠিকানা জোগাড় করে সদলবলে হাজির। অতঃপর কী আর করা। সবাইকে নিয়ে বাসার পাশে এক রেস্টুরেন্টে সমঝোতা বৈঠকে বসেন। কোনো টাকা দিতে না পারলেও টানা দু’ঘণ্টার মিটিংয়ে পাওনাদার কর্মকর্তাদের আশ্বাস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ঘুষগ্রহীতা পদস্থ কর্মকর্তা তাদের বলেন, ‘আমি শিগগির খাদ্য মন্ত্রণালয় বা অন্য কোথাও ভালো পোস্টিং পাব। তখন তোমাদের সব টাকা ফেরত দিয়ে দেব। আমি কারও টাকা মেরে খাওয়ার লোক না।’ আলোচ্য এ কর্মকর্তার নাম সালাউদ্দিন মাহমুদ। পদমর্যাদায় তিনি অতিরিক্ত সচিব। তার ব্যাচের অনেকে এখন সচিব। তিন মাসের জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ৮৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে তিনি ঘুষের রেকর্ড গড়েন। অভিযোগ আছে, এ পদে নিয়োগ পেতেও তিনি বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করেন। টাকার জোগান দেন মাদকের এক কর্মচারী।
যে কারণে ডিজির চেয়ারে বসেই রীতিমতো ঘুষের দরবারে বসে যান। গণহারে টাকা নেয়া শুরু করেন। বদলিও করতে থাকেন ইচ্ছেমতো। কিন্তু হঠাৎ ওএসডি হওয়ার খবরে বিনা মেঘে বজ পাতের মতো অবস্থা হয়। তা সত্ত্বেও তিনি ঘুষের টাকা জায়েজ করতে বদলি বাণিজ্য অব্যাহত রাখেন। কিন্তু বাদসাধে মন্ত্রণালয়। ওএসডি হওয়ার পর তিনি যেসব বদলি করেন তা বাতিল করে দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। এর ফলে ঘুষের বেশকিছু টাকা তার কাছে রয়ে গেলেও তিনি ঘুষদাতাদের কাজ করে যেতে পারেননি। জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওনা টাকা ফেরত পেতে তাকে মাস খানেক ধরে জোর তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু দিচ্ছি, দেবেন বলে একসময় ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। এরপর ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তারাও ঢাকায় এসে জড়ো হন। খুঁজে বের করেন সালাউদ্দিন মাহমুদের বাসা। ঘুষের টাকা ফেরত চাইতে গত ৪ আগস্ট তারা সদলবলে সেখানে হাজির হন। দেখা হওয়ার পর অতিরিক্ত সচিবকে সাফ জানিয়ে দেন, টাকা না নিয়ে কেউ ফিরে যাবেন না। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে বসতে বাধ্য হন সরকারের এই পদস্থ কর্মকর্তা। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় (৩০ শাহজালাল এভিনিউ, সেক্টর-৪) নিজের বাসার সামনে ‘হ্যান্ডশেক’ নামের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঘুষের টাকা ফেরতের বিষয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ সময় তারা পাওনা টাকার ডকুমেন্ট রাখতে মোবাইল ফোনে আলোচনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিও রেকর্ড করেন। যার একটি কপি সম্প্রতি যুগান্তরের কাছেও আসে। রেকর্ডকৃত ভিডিওতে তাদের মধ্যকার আলোচনার সারসংক্ষেপ হুবহু তুলে দেয়া হল- নারকোটিক্স কর্মকর্তা : কেমন আছেন স্যার, নতুন কোথাও পোস্টিং পেলেন?
সাবেক ডিজি : না। এখনও হয়নি।
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘স্যার আপনাকে ফোন দিলেও তো ফোন ধরেন না। আমার পোস্টিংয়ের জন্য আপনাকে যে টাকা দিয়েছি তা ফেরত চাই না। কিন্তু একটা মদের বারের ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন আর একজন সিপাই বদলির জন্য যে টাকা নিয়েছেন, তা ফেরত দেন। যেহেতু কাজ হয়নি। ওরা টাকা ফেরত চাইছে। তাই টাকাটা ফেরত দেন। এ কথা শুনে তিনি কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কিচ্ছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘আপনারা শুধু টাকা ফেরত চাইছেন। কিন্তু ওই যে, মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছিল মেট্রো থেকে মেট্রো (ঢাকার মধ্যে) বদলি না করার। সেটা তো আপনারা কেউই আমাকে বলেননি। মেট্রো থেকে মেট্রো বদলি করার কারণেই কিন্তু আমার এ অবস্থা হল। আমার সার্ভিস বুকে কালো দাগ পড়ে গেল। এখন সেটার কি হবে বলেন?’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘না স্যার, আপনাকে আমরা সব খুলে বলেছিলাম। বলেছি, এভাবে বদলি কইরেন না স্যার। কিন্তু আপনি শোনেননি। স্যার, যাই বলেন, আপনার এতগুলো পোস্টিং করা উচিত হয়নি।’
সাবেক ডিজি : ‘কি করব বলেন, ওপরের প্রেসার ছিল। জানেন না, ওই যে একটা পোস্টিংয়ের জন্য তিনি তো (জনৈক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা) নিজেই আমাকে দুই দিন ফোন করেছেন। তাছাড়া কাশেম (জনৈক ইন্সপেক্টর) না কি যেন নাম, তার বদলির জন্য ওই এমপি (প্রভাবশালী নারী এমপি) নিজেই আমার অফিসে চলে এসেছেন। আপনারা তো জানেন এমপির বড় বোন একজন প্রভাবশালী সচিব। তাছাড়া যেগুলো বদলি করেছি তা তো পোস্টিং কমিটির মতামত নিয়েই করেছি। কমিটিতে এডিজি পরিমল ও আহসান (উপ-পরিচালক প্রশাসন) দু’জনেই ছিলেন।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘স্যার, আমরা কিন্তু আগেই বলেছিলাম কমিটি যাই বলুক, বদলির সব দায়-দায়িত্ব কিন্তু আপনার।’
সাবেক ডিজি : ‘এখন ওসব বাদ দেন; যা হওয়ার হয়েছে। তবে আমার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে ইন্সপেক্টর শাহীন (ধামরাই সার্কেলের ইন্সপেক্টর শাহীনুল কবির। তিনি জনৈক প্রভাবশালী মন্ত্রীর এপিএসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু)। শাহীনের সঙ্গে তোজাম্মেল (রাজবাড়ীতে কর্মরত কথিত ক্ষমতাবান সিপাই) মিলে আমার ক্ষতিটা করল।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘স্যার, খাঁন সাহেবও (ডিজির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি) আপনাকে দিয়েছে ২৪ লাখ। আরেকজন ইন্সপেক্টর বদলির জন্য দিয়েছে ১৮ লাখ। আপনার সামনে বসেই এই টাকা দিলাম স্যার। আপনার মনে আছে কি?’
সাবেক ডিজি : আমতা আমতা করে, ‘হুম... ওই যে... দিয়েছিলেন। হ্যাঁ ঠিকই আছে।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘স্যার, আরেক ইন্সপেক্টর বদলির জন্য ৪ লাখ টাকা দিয়েছিল। একজন সাব-ইন্সপেক্টর বদলির জন্য দেয় ২ লাখ। এটা সরাসরি আপনাকেই দিয়েছে। আর আমি নিজে আরেক সাব-ইন্সপেক্টরের জন্য আপনাকে দিয়েছি ২ লাখ টাকা। তাছাড়া একটা বারের ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৩ লাখ দিয়েছি স্যার। এই টাকাগুলো তো স্যার অন্য মানুষের। ফেনীর ইন্সপেক্টর বদলির জন্য স্যার আপনি নিয়েছেন ৪ লাখ। স্যার, ওই যে...। মনে নাই স্যার, যে সাব-ইন্সপেক্টর পিআরএলে যাবে তাকে গাজীপুরে বদলির জন্য ২ লাখ নিয়েছিলেন। এগুলো এখন ফেরত দিতে হবে তো স্যার।’
সাবেক ডিজি : ‘হ্যাঁ, আপনারা সে সময় কিছু কিছু করেছেন। সব তো মনে নেই। তবে আমার পোস্টিংটা হয়ে গেলেই এগুলো আমি... দিয়ে দেব। মানে সুযোগমতো আস্তে আস্তে দিয়ে দিব। হু বুঝঝেন তো আমি আস্তে ঠিকই দিয়ে দেব।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘না স্যার। টাকাগুলো এই সপ্তাহে দিতে হবে। দেয়া যাবে স্যার? এগুলো তো মানুষের টাকা। তারা আমাদের কাছে চাইছে। কারণ টাকাগুলো তো স্যার আমরাই নিয়ে আপনাকে দিয়েছি।’
সাবেক ডিজি : ‘দেখেন তো, এখন ক্যামনে কি করি। এখন হাতের অবস্থা একেবারেই...। আচ্ছা ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশনের (বারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মদ বিক্রির অনুমোদন সংক্রান্ত) বিষয়টা তো হয়ে গিয়েছিল। তাই না। ওটা তো ফাইল ওয়ার্ক। ওটা তো হয়ে যাওয়ার কথা।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘না স্যার, ফাইলটা নিচে নেমেছিল। উপরে উঠলে হওয়ার কথাছিল। কিন্তু ফাইল আর উপরে ওঠেনি। উঠবে উঠবে অবস্থায় এডিজির টেবিলে ছিল। এর মধ্যেই তো আপনি বদলি হয়ে গেলেন।’
সাবেক ডিজি : ‘হুম... দেখেন, এর মধ্যে আমারও কিছু খরচ-টরচ হয়েছে। ওই যে, সহিদ সাহেব (জনৈক মন্ত্রীর বাল্যবন্ধু) আছেন। আরও কয়েকজন আছেন। তাদেরকে কিছু কিছু... (ঘুষ) দিয়েছি। তারপর শেষ মুহূর্তে আমার বদলি ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু খরচ হয়েছে।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘আপনিও সহিদকে দিয়েছেন স্যার? খাঁন সাহেবও তো তাকে কিছু টাকা দিয়েছে শুনেছি।’
সাবেক ডিজি : ‘না, ভুয়া কথা। সে কিছুই দেয়নি। খামোখা এসব কথা বলছে।’
নারকোটিক্স কর্মকর্তা : ‘স্যার, খাঁন সাহেব আপনার কাছে আগামীকাল আসবে। সেও তো আপনার কাছে ২৮ লাখ টাকা পাবে।’
সাবেক ডিজি : ‘কিভাবে টাকা ফেরত দিব বলেন, কয়েকটা পোস্টিংয়ে তো কিছুই পাইনি। ওরা এমনিই আসছে। তাদের কাছে কি কিছু পেয়েছি, বলেন? কিচ্ছুই না। একটু অপেক্ষা করেন। আমার ভালো একটা পোস্টিং হলেই কিছু কিছু করে দিয়ে দিব।’ এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারকোটিক্সের আরেকজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘সাবেক ডিজি সালাউদ্দিন মাহমুদ শুধু বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে ঘুষ নিয়েছেন তা নয়; অধিদফতরের আওতাধীন মদের বারের মালিক লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও নানা ছুঁতোয় ঘুষ নেন। এমকি অবৈধ মদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে চলতি বছরের মার্চে প্রভাবশালী ধানমণ্ডি ক্লাবে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষ থেকে প্রায় ২ ট্রাক অবৈধ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় ক্লাবের কর্মকর্তারা পালিয়ে যান। পরে এ সংক্রান্ত মামলার আসামিসহ সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্মকর্তারা নিজেদের বাঁচাতে গোপনে তৎকালীন ডিজির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। একপর্যায়ে ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্মকর্তা জীবন বাবুর সঙ্গে তিনি গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকে বসেন। আসামিদের বাদ দিয়ে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ঘুষের টাকাভর্তি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু তিনি জানতেন না রেস্টুরেন্টের বাইরে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তার ওপর নজর রাখছেন। ফলে তার রেস্টুরেন্টে ঢোকা থেকে শুরু করে বৈঠক-পরবর্তী ‘ভারি ব্যাগ’ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেয়া হয়। সূত্র জানায়, গত ২৯ মার্চ সালাউদ্দিন মাহমুদ ডিজি হিসেবে যোগ দেয়ার আগে নারকোটিক্সে রীতিমতো বদলি বাণিজ্যের মহোৎসব চলে। তার পূর্ববর্তী মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান মাত্র এক বছরে প্রায় সাড়ে ৭শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করলে মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। নতুন ডিজি পোস্টিং দেয়ার পর পরই লিখিত আকারে বেশ কয়েকটি গাইডলাইন দেয়া হয়। বিশেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও বার লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে এই গাইডলাইন কঠোরভাবে মেনে চলার কথা বলা হয়। কিন্তু ডিজি হিসেবে যোগ দিয়েই সালাউদ্দিন মাহমুদ ফের বদলি বাণিজ্য শুরু করেন। মাত্র এক মাসের মধ্যে তিনি অন্তত ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু নোটিশকে পাত্তা না দিয়ে আরও কয়েকটি বদলির অর্ডার জারি করলে ক্ষুব্ধ হয় মন্ত্রণালয়। ২৯ জুন তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত) করা হয়।
ফলে ডিজির চেয়ারে বসার পর ৩ মাস না পেরোতেই তার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। জুনেই সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জামাল উদ্দীন আহমেদকে নতুন ডিজি নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু জামাল উদ্দীন আহমেদ বিদেশে থাকায় দায়িত্ব হস্তান্তর বিলম্বিত হয়। এ সুযোগে প্রশাসনিক কাজের সব নজির ভেঙে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে তিনি আরও কয়েকটি বদলি অর্ডার জারি করেন। এমনকি ভেতরে ভেতরে তিনি গুলশান-২ এলাকায় নবনির্মিত একটি ৪ তারকা হোটেলে মদের বার লাইসেন্স ইস্যুর প্রক্রিয়াও চালান। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে তার সেই উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায়। ওএসডি হওয়ার পর তার সব অফিসিয়াল কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বদলি বাণিজ্য ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালাউদ্দিন মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, এসব ঘটনা একেবারেই সত্য নয়। তাকে কেউ ঘুষের টাকা দেয়নি। কেউ তার কাছে কোনো টাকা-পয়সাও চাচ্ছে না। তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বদনাম ছড়াতে কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথাবার্তা ছড়াতে পারে। এদিকে সাবেক ডিজির এ ধরনের বদলি বাণিজ্যের বিষয়ে করণীয় জানতে চাইলে বর্তমান ডিজি জামাল উদ্দীন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা পেছন ফিরে তাকাতে চাই না। আমরা অধিদফতরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’ তিনি বলেন, ৩ মাসের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। সেটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে স্বেচ্ছায় অনত্র বদলি হবেন।

No comments

Powered by Blogger.