সুবহানের আপিল শুনানি ১৬ অক্টোবর

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের করা আপিল শুনানির জন্য ১৬ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ বুধবার এই তারিখ ধার্য করেন। আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নাল আবেদীন তুহিন। আদেশে আদালত বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলকারী পক্ষ আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমে দেবে। পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সংক্ষিপ্তসার দেবে। উভয় পক্ষকে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে হবে। সুবহানের আপিলটি আজ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চের কার্যতালিকার তিন নম্বর ক্রমিকে আদেশের জন্য ছিল। এই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এর আগে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম এবং সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের করা পৃথক আপিল ১৩ আগস্ট আদেশ প্রদানের জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আদালত আপিল দুটি শুনানির জন্য ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন, সেই সঙ্গে ২৪ আগস্টের মধ্যে উভয় পক্ষকে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে নির্দেশ দেন। এর দুই দিনের মাথায় সুবহানের আপিল কার্যতালিকায় এল। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সুবহানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ে সুবহানের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণিত হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ মার্চ আপিল করেন সুবহান। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুবহানকে আটক করে। ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এর আগে ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ  খালাস চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন আব্দুস সুবহান। তার পক্ষে আইনজীবী শিশির মুনির এ আবেদনটি দায়ের করেন। ৮৯ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ১৮২ পৃষ্ঠার নথিতে সুবহানের খালাসের পক্ষে ৯২টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি এ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনায় সুবহানের নেতৃত্বে রাজাকার, আলবদর ও আল -শামস বাহিনী ব্যাপক হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায় বলে রায়ে উঠে আসে।
প্রসিকিউশনের আনা নয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ৭৯ বছর বয়সী সুবহানের দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনার একটি ফৌজদারি মামলায় সুবহানকে গ্রেফতার করার পর ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। এরপর বিচার কার্যক্রম শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সুবহানকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৮ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। ৮৯ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ১ হাজার ১৮২ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনে ৯২টি যুক্তি দেখানো হয় তার খালাসের জন্য। আব্দুস সুবহানের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির আপিল আবেদন দায়েরের পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ট্রাইবুনাল মাওলানা সুবহানকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে যে রায় দিয়েছে, ওই রায়ে ৯২টি ত্রুটি সনাক্ত করে তিনটি ভলিউমে ১১৮২ পৃষ্ঠার আপিল আবেদন দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১২ সালের একটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের কথা বলেছিলেন। অথচ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীরা বলেছেন, ওই ঘটনাস্থল ৪০ বছর আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই মামলার ৬ জন সাক্ষীর বয়স ২ থেকে ৬ বছর যারা কোনভাবেই ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.