ঘাতকরা কাউন্সিলর রাজিবের ঘনিষ্ঠ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নিহত যুবলীগ কর্মী তছির উদ্দিনের ‘ঘাতকরা’ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জমান রাজিবের ঘনিষ্ঠ। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে তছিরকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হল- জাকির, হাসান, সোলেমান, ফিরোজ এবং শাহীন। এদের মধ্যে জাকির, সোলেমান এবং ফিরোজ সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। একই দিনে হাসান এবং শাহীনকেও আদালতে হাজির করা হয়। তবে তারা স্বীকারোক্তি দেয়নি। পাঁচজনই কারাগারে আছে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর মঙ্গলবার রাতে যুগান্তরকে এসব তথ্য জানান। ওই থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন মিয়া জানান, জাকির হলেন যুবলীগ সাত মসজিদ হাউসিং ইউনিটের সভাপতি। হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর ঘাতকরা সবাই ঢাকার বাইরে চলে যায়। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। ৯ আগস্ট রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরের রাজধানী উদ্যান এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন যুবলীগ কর্মী তছির উদ্দিন। পরদিন রাতে তছিরের বোন মোছা. মুন্নি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ- খুনিরা কাউন্সিলরের লোক। প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতারে প্রথমদিকে কালক্ষেপণ করে।  তবে এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব যুগান্তরকে বলেন, ‘কে কার লোক আর কে প্রভাবশালী এটা দেখার কোনো সুযোগ নেই। যারা অপরাধ করছে তারা যেমন আমাদের লোক। আবার যারা ভিক্টিমাইজড হয়েছে তারাও আমাদের লোক। অপরাধ করে নিজের লোক বলে পার পেয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই ঘাতকদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।’ মামলার বাদী মোছা. মুন্নি শনিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার ভাইকে বুধবার রাতে হত্যা করা হয়। অথচ পরদিন সকালে পুলিশ আমাদের বাসায় এসে বলে আপনাদের নামে মামলা আছে। থানায় যেতে হবে। পরে আমি এবং আমার ভাই নাসিরকে থানায় নিয়ে বলা হয়, তছির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা ভালো। আপনারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিতে পারেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।’ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার দাবি করে মুন্নি বলেন, ‘ফোন করে ডেকে নিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। তার সঙ্গে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এবং বাসার চাবি ছিল। কিছুই পাওয়া যায়নি।’ তিনি জানান, তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল তছির। সে যুবলীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদে ছিল না। এর আগে আরও দু’বার তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। স্থানীয়রা জানায়- এলাকায় মাদক ব্যবসা, ডিশ ব্যবসা, গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণ, খাল ভরাট করে দোকান নির্মাণ ও খাসজমি দখলকে কেন্দ্র করে রাজিব এবং কাইল্যা সুমনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছি। কাইল্যা সুমনের গ্রুপে কাজ করত তছিরসহ কয়েকজন। আর রাজিব গ্রুপে ছিল জাকির, হাসান, সোলেমান, ফিরোজ এবং শাহীন। আগামী কোরবানির ঈদে বসিলার রাজধানী উদ্যানে গরুর হাট বসানো হবে। এ হাটের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন বিষয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তছিরের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। ওই ঘটনা মীমাংসার জন্য রাত ১২টার দিকে দুই পক্ষ বৈঠকে বসে। এ সময় বাকবিতণ্ডার জেরে তছিরকে ছুরিকাঘাত করা হয়। মামলাটির তদন্ত যথাযথভাবেই এগুচ্ছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব জানান, ইয়াবা ব্যবসায় অধিপত্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে বুধবার সন্ধ্যায় তছিরের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ জাকিরের ডিশের দোকানসহ ৭-৮টি দোকানে হামলা চালায়। পরে জাকির গ্রুপের সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে তছিরের ওপর হামলা চালায়। এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, ‘জাকিরের দোকানপাটে হামলার পর আমি জাকিরকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিই। তারা থানায় গিয়েছিল। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় জাকির মামলা না করে থানা থেকে ফিরে আসে। পরে জানতে পারি, জাকির গ্রুপের হামলায় তছির নিহত হয়েছে।’ কাউন্সিলর রাজিব জানান, ইদানীং এলাকায় অল্প বয়সী ছেলেরা দল বেঁধে চলাফেরা করে। কে কোন গ্রুপে কাজ করে তা বুঝা মুশকিল। তারা যেখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় মাদকবিরোধী সামাজিক অন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘গত নির্বাচনে যে প্রার্থী আমার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। হত্যাকারীরা আমার লোক বলে প্রচার চালিয়ে মামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।’

No comments

Powered by Blogger.