শ্রদ্ধা ভালোবাসায় জাতির জনককে স্মরণ

বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত এ দিবসের শুরুতে তার প্রতিকৃতি এবং ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিনটি পালনের অংশ হিসেবে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া-মাহফিল, আলোচনা সভা, দেশব্যাপী গরিব ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করে। এছাড়া রক্তদান কর্মসূচি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচিতে বাঙালির মুক্তির পথপ্রদর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় রাষ্ট্র ও সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিসহ দেশের আপামর মানুষ। শারীরিকভাবে অনুপস্থিত থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেতনায় অমর-অবিনশ্বর, আজও তার আদর্শ সমুজ্জ্বল- সমগ্র জাতি যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তা আবারও প্রমাণ করল। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার ছিল সরকারি ছুটি। এদিন বিভাগীয় ও জেলা শহরে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালিত হয়। সর্বস্তরের মানুষ শোকের এ দিনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদের একাত্মতা ঘোষণা করেন। দেশের সব মসজিদে দোয়া মাহফিলের পাশাপাশি সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বঙ্গবন্ধু ও অন্য শহীদদের জন্য প্রার্থনা করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি রেডিও এবং টিভি চ্যানেলে থেকে প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দেন। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশের রাস্তাসহ রাজধানীজুড়ে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও তোরণ তৈরি করা হয়। সোমবার রাত থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ, জাতির জনককে নিয়ে গান, কবিতা প্রচারিত হয়। রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় সারা রাত মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার করা হয়। রাজপথ থেকে অলিগলি সর্বত্রই বঙ্গবন্ধুর ছবি, শোক প্রকাশ করে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়। সব মিলিয়ে সারা দেশেই বিরাজ করছিল শোকাবহ পরিবেশ। এদিকে আজ বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে শোকসভা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বিশ্বের ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডে সেদিন বঙ্গবন্ধুপত্নী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজি জামাল ও তার আত্মীয়-স্বজনসহ অন্যরা শাহাদাত বরণ করেন। সেদিন বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ১৫ আগস্টের দিনের শুরু হয় সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে। সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সালাম জানায়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এরপর দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দোলোয়ার হোসেন, আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পড়েছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময় তার পাশে ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি কিছু সময় কাটিয়ে বনানীতে অবস্থিত ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করার জন্য যাত্রা করেন। তারপর ১৪ দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জোটের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জোটের এবং নিজ নিজ দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং মহাসচিব ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফউইজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা স্থান ত্যাগ করলে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। পুষ্পে ভরে যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও এর আশপাশ। কয়েক স্তরে জমে ওঠে সেগুলো স্থান করে নেয় প্রতিকৃতির চারপাশে। শ্রদ্ধা জানায় মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর। আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, মহিলা শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, খেলাঘর, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, জাতীয় মহিলা সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ এসব ব্যাংকের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি, বঙ্গবন্ধু ফেডারেশন, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, সাধনা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সমাজকল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস অফিসার্স কল্যাণ সমিতি, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, সোনার বাংলা যুব পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়। বনানীতে ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন : এদিকে বনানী কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ১৫ আগস্ট নিহত স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দলের অন্য নেতারা। নিহতদের স্মরণে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সঙ্গীরা। সেখানে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিটি শহীদের কবরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিতে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বনানী কবরস্থান সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর সেখানে আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম-সমমনা সংগঠনসহ সর্বস্তরের অগণিত মানুষ নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন : যুগান্তরের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া পৌঁছেই সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরে ফাতেহা পাঠ ও ’৭৫-র ১৫ আগস্টে নিহত ও মুক্তিযুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু বাসভবনে চলে যান। সেখানে বসে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে পৌনে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে তিনি মাজার কমপ্লেক্স মসজিদে অনুষ্ঠিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ও জাতীয় সংসদের হুইপরা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গভবনে দোয়া মাহফিল : জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মিলাদ মাহফিলে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, সংশ্লিষ্ট সচিব, বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল করিব মোনাজাত পরিচালনা করেন। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দরবার হলে প্রদর্শন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু ভবনে মহিলা লীগের মিলাদ মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে বাদ আসর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে মহিলা লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার নিকটাত্মীয়রা, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা খাতুন কৃকসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের অন্য সদস্য এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের জন্য দোয়া ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।
ঢাবিতে শোক দিবস পালিত : জাতির জনকের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিল- সব ভবন ও হলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা রহস্য ও ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনের আহ্বান জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান। এর আগে উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন আলোকচিত্র স্থান পায়।
খালেদা জিয়া সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করেছেন -কাদের : জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ভুয়া জন্মদিন পালন করে খালেদা জিয়া সংলাপের পরিবেশ নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, ভুয়া জন্মদিন পালন করে খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের ধারাকে ব্যাহত করছে। তার ম্যারেজ সার্টিফিকেট ও পাসপোর্টে ১৫ আগস্ট জন্মদিন নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাড়ি গিয়েছিলেন কিন্তু তিনি দেখা করেন নাই। সেদিন খালেদা জিয়া দেখা করলে সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি হতো। এ সময় তিনি বলেন, বিদেশে থাকা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। এ সরকারের মেয়াদে তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
আওয়ামী লীগকে আবারও ভোট দেয়ার আহ্বান মতিয়া চৌধুরীর : দুপুরে যাত্রাবাড়ীর মালঞ্চ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গিয়াস উদ্দিন গেসুর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ হারুনর রশীদ মুন্না, ৪৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার আবুল কালাম অনু, আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ মিলন, এসএম আলী হোসেন রানা, ইসমাইল হোসেন খানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অবস্থান শনাক্ত- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কোন কোন দেশে আছে তা শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সকালে ধানমণ্ডির ৩২ এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক হত্যাকারীরা কে কোথায় আছে মোটামুটি আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।’ তিনি বলেন, শিগগিরই নূর চৌধুরীসহ তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং আদালতের রায় আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি খুনিদের কার কোথায় কোন সম্পত্তি আছে সেগুলোকে আমরা বাজেয়াপ্ত করব।
বিএনপি-জামায়াত সরকার উৎখাতের চক্রান্তে লিপ্ত- হানিফ : ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের ২০ নং ওয়ার্ডের আয়োজনে কাঙালি ভোজের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের এজেন্ট হয়ে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্তে লিপ্ত। হত্যাকাণ্ডের যারা পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিল, তাদের বিচার এখনও হয়নি। তাই সেই চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে মরণোত্তর বিচার করার দাবি জানান। ২০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন মনুর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় প্রমুখ।
যে পথে ঘাতকের ট্যাঙ্ক সে পথে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের আলোর মিছিল : এদিকে যে পথে ঘাতকের ট্যাঙ্ক গিয়ে জাতির পিতাকে হত্যা করে জাতীয় শোক দিবসে সে পথে ৪২টি মশাল নিয়ে ‘আলোর মিছিল’ করেছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানে’র একাংশ। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ টিঅ্যান্ডটি মাঠের সামনে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়াসহ মুক্তিযোদ্ধা নেতারা আলোর মিছিলটি উদ্বোধন করেন। সংগঠনের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে এতে আরও অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. কাজী সাইফুদ্দিন, সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ রনি ও আল-আমিন মৃদুল প্রমুখ। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে তা শেষ হয়। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ আরেকাংশের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা শফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে শোকর‌্যালি করে। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
শাহবাগে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেকদের আয়োজনে খাবার বিতরণ : এদিকে শাহবাগে কাঙালি ভোজের আয়োজন করেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ মস আরেফিন সিদ্দিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে খাবার বিতরণ করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দোলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাজহারুল ইসলাম মানিক, যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, যুবলীগের উপ-দফতর সম্পাদক নাসিম আল মুমিন রুপক প্রমুখ।
প্রেসক্লাবে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব। সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন সাংবাদিকরা।
শোক আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় : রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে শোক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু। আরও বক্তব্য দেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুশফেরা ইকফাৎ, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্টাচার্য, ট্রেডিং কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সালেহ মো. গোলাম আম্বিয়া, প্রধান আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক আফরোজা খানসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
কলাবাগানে বিপুল আয়োজনে কাঙালিভোজ : রাজধানীর কলাবাগানে কাঙালিভোজের আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আফজাল বাবু প্রমুখ। প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য রেমন্ড আরেং, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার, আসাদুজ্জামান রিপন প্রমুখ। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বিজিবির জাতীয় শোক দিবস পালন : সকাল ১০টায় পিলখানা বিজিবি সদর দফতরে বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিসুর রহমান, মেজর তানভীর আহমেদ নিজামী, দিল মাহমুদ, রাজিউর রহমান, জাহানার আক্তার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কর্নেল শহীদুর রহমান। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাতসহ অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর নাম মুজিবনগর করার দাবি : রাজধানী ঢাকার নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ভাসানী, বাংলাদেশ জনতা পার্টি ও জয়বাংলা মঞ্চ মানববন্ধন করে এ দাবি জানায়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে রাজধানী ঢাকার নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর করতে হবে। তিনি বাংলাদেশে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের লড়াই-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা -আবু হোসেন বাবলা : বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়, তিনি সমগ্র দুনিয়ার নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের লড়াই-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। বাঙালি জাতির জনক ১৬ কোটি মানুষের মহানায়ক। কোনো দল যদি তাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে ব্র্যাকেটবন্দি করে রাখতে চায়, তাহলে তা হবে দুঃখজনক। মঙ্গলবার রাজধানীর দোলাইরপাড়ে তেজগাঁও উন্নয়ন সার্কেল আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। সার্কেল অফিসার শাহনাজ সুলতানার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার শামীম মুশফিক, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাঈনুল ইসলাম, শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম মোল্লা, কৃষি কর্মকর্তা এবিএম ওয়াহিদুর রহমান ও সুজন দে।
রিহ্যাবের শোকসভা : উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল পালন করেছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সংগঠনের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে প্রায় ১ হাজার ২০০ দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এ কর্মসূচিতে রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম) লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, রিহ্যাব পরিচালক ও প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ, রিহ্যাব পরিচালক নাইমুল হাসান, আসাদুর রহমান জোয়ার্দ্দার, প্রকৌশলী মো. আল আমিন, শাকিল কামাল চৌধুরী, এসএম জাহিদুর রহমান, মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক এবং কামরুল ইসলামসহ পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং রিহ্যাবের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সমবায় অধিদফতরের শোকসভা : জাতির জনকের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকীতে সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক আবদুল মজিদের (অতিরিক্ত সচিব) নেতৃত্বে অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠ সংলগ্ন রাস্তা থেকে র‌্যালি নিয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আর সকাল সাড়ে ১০টায় সমবায় অধিদফতর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম মাফরূহা সুলতানা, সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক, বি.সি.এস (সমবায়) অ্যাসোসিয়েশন এবং সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
শেকৃবিতে শোক দিবস পালন : কালো ব্যাজ ধারণ, গভীর শোক, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও যথাযোগ্য মর্যাদায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘স্মরণে জাতির পিতা’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, জাতির পিতার জীবনীর ওপর উপস্থিত বক্তৃতা ও কাঙ্গালি ভোজ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়।
কাপাসিয়ায় শোক দিবস পালিত : গাজীপুরের কাপাসিয়ার তারাগঞ্জে শহীদ তাজউদ্দীন ও ময়েজউদ্দীন স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও গণভোজের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন শরিফ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন । তিনি বলেন, জাতির শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নত জাতিতে পরিণত করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সমর্থন অব্যাহত রেখে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজগর রশীদ খান ও যুবলীগ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা।
হাইকোর্ট মাজার শরিফ প্রাঙ্গণ : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ওলিয়ে বাংলা হযরত শাহ খাজা শরফুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর মাজার শরিফে (হাইকোর্ট মাজার) আলোচনা সভা, কাঙালি ভোজ কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও মাজার প্রশাসন কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এতে আরও অংশ নেন বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমান, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি আমির হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আবু মো. দিলজার হোসেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামরুল হোসেন শিকদার প্রমুখ।
সিপিবির শোক সভা : দিনটি পালনে শোক সভা করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। মঙ্গলবার বিকালে পুরানা পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রণো, কেন্দ্রীয় নেতা লুনা নূর, ডা. সাজেদুল হক রুবেল প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.