গুয়ামে উত্তর কোরিয়ার হামলার পরিকল্পনা স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে পরে ‘বেপরোয়া পদক্ষেপ’ নেয়া হলে উত্তর কোরিয়া আরও আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পিছপা হবে না বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। গুয়ামের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পরিকল্পনার বিষয়ে মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত ব্রিফিং নেয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেন কিম জং উন। হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ‘আহাম্মক ইয়াংকিদের’ পদক্ষেপ দেখতে চান তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, গুয়ামে হামলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না থাকায় সময়ক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর কোরিয়া। খবর বিবিসি ও এএফপির। গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানগুলোর ঘাঁটি গুয়ামের উপকূলীয় সাগরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা তৈরি করছে তারা। উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ চলার মধ্যে এ কথা জানিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কিম জং উন পরিকল্পনাটি দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘গুয়ামকে আগুন দিয়ে ঘিরে ফেলার প্রস্তুতি নেয়ার’ আদেশের জন্য অপেক্ষা করছেন উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত বাহিনীর কমান্ডার। কিম বলেন, ‘বহু কৌশলগত পরমাণু উপকরণ প্রথম আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাই সঠিক সিদ্ধান্তটা প্রথমে তাদেরই নেয়া উচিত। যদি কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা কমানোর ইচ্ছা তাদের থাকে এবং বিপজ্জনক একটি সামরিক সংঘাত ঠেকাতে চায় তাহলে কাজের মাধ্যমে তাদের তা দেখানো উচিত।’ তবে অ্যাকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে প্রস্তুত থাকার জন্য সেনাবাহিনীকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এদিকে কোরীয় উপদ্বীপে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিরসনে একটি কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল জোসেফ ডানফোর্ডকে জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ অগ্রাধিকার শান্তি এবং এতেই দেশটির জাতীয় স্বার্থ নিহিত। পাশাপাশি ‘উসকানি ও শত্রুতামূলক সব বাগাড়ম্বর’ বন্ধ করতে উত্তর কোরিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মুন জায়ে বলেন, কোরীয় উপদ্বীপে সামরিক হামলার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার মতামত ছাড়া কোনো পক্ষই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সতর্ক করে বলেন, উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে কোনো হামলা হলে দ্রুত যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘যে কোনো সময় যে কোনো এলাকা থেকে আসা যে কোনো হামলা থেকে দেশকে রক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী।’ অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনি সোমবার কোরিয়া উপদ্বীপে চলমান সংকটের ‘সামরিক পন্থায় নয়, শান্তিপূর্ণভাবে’ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চলমান উত্তেজনাকে আরও উসকে দিতে পারে ‘নতুন করে এমন কোনো উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড’ না চালাতে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে কোরীয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনা নিরসন প্রয়োজন।’ পিয়ংইয়ংকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার ইউক্রেনের : ইউক্রেন বলেছে, দেশটি কখনোই উত্তর কোরিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিসহ কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বা প্রযুক্ত সরবরাহ করেনি। নিউইয়র্ক টাইমস এ ধরনের দাবি করার পর তা প্রত্যাখ্যান করল কিয়েভ। পিয়ংইয়ংয়ের ধারাবাহিক পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে যখন আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, তখন এ ঘোষণা দিল ইউক্রেন। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সচিব ওলেকজান্ডা?র তুর্চিনভ বলেন, ‘ইউক্রেন কখনোই উত্তর কোরিয়াকে রকেট ইঞ্জিন বা অন্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি দেয়নি।’ ইউক্রেনের সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারী রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ‘ইউঝমাশ’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ওই কোম্পানি সামরিক কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কোনো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেনি।

No comments

Powered by Blogger.