আদুরী নির্যাতন মামলায় গৃহকর্ত্রীর যাবজ্জীবন

গৃহকর্মী আদুরীকে নির্যাতন ও ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছেন আদালত। এই টাকা আদুরীকে প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়।  সোমবার বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে নওরীন জাহান নদীর মা’র বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেন আদালত। পটুয়াখালীর মেয়ে আদুরীর শরীরের ক্ষত চিহ্নগুলো এখনও স্পষ্ট হয়ে আছে। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে নির্যাতনের শিকার অর্ধমৃত অবস্থায় আদুরীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তখন এ নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠির কৌরাখালি গ্রামের মৃত খালেক মৃধার ছোট মেয়ে আদুরী। অভাবের কারণে মা সাফিয়া বেগম ৯ সন্তানের সবাইকে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠান। আদুরীকে প্রতিবেশী চুন্নু মীরার সহযোগিতায় রাজধানীর গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীর বাসায় পাঠানো হয়।
তবে নানান অজুহাতে নদীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয় সে। দুই বেলা খাবারের বদলে তার মুখে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দেয়া হতো। এছাড়াও নির্যাতনে ব্যবহার করা হতো খুন্তি, গরম ইস্ত্রি, চাকু ও ব্লেড। সুস্থ হওয়ার পর এমন তথ্য দেয় আদুরী। নির্যাতনের একপর্যায়ে নদী ও তার মা ইসরাত জাহান পল্লবীর ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে তাকে ফেলে দিয়ে যায়। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দুই নারীকর্মী অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করে আদুরীকে। পরে পুলিশের সহায়তায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেড় মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হলে ৩ নভেম্বর তাকে তুলে দেয়া হয় পরিবারের কাছে। একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আদুরীর মামা মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে নদী ও তার মাকে আসামি করে নির্যাতনের ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করেন। পরে নদীকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে। আদালতে তিনি নির্যাতনের দায় স্বীকার করেন। ১০ অক্টোবর নদী ও তার মাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আজ গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে এই মামলার রায় ঘোষণা করলেন আদালত। আদুরী বর্তমানে জৈনকাঠি ছালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আদুরীর মা সাফিয়া বলেন, ব্যথায় প্রতি রাতে মেয়ে ডাকচিৎকার করে। এখন প্রয়োজন সুচিকিৎসা। অভাবের কারণে আদুরীর চিকিৎসা ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.