দুই বছরেও চাকরি পাননি ৭০ খাদ্য পরিদর্শক

দুই বছরেও খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ পাননি ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৭০ জন। ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট তাদের খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। নিয়োগবিধি না থাকার অজুহাতে তাদের নিয়োগ দিচ্ছে না খাদ্য অধিদফতর। প্রক্রিয়া শেষে কবে নাগাদ কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন এমন কোনো তথ্য দিতে পারছে না মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। নিয়োগ পেতে খাদ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদফতর ঘুরে ঘুরে এখন সময় কাটছে তাদের। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি শতভাগ সত্য। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসনামলে করা নিয়োগ বিধিমালা এখন অকার্যকর। এটি না থাকায় তাদের নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। নিয়োগবিধি প্রণয়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই তা সচিব কমিটিতে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।’ দুই বছরেও কেন নিয়োগবিধি তৈরি হয়নি- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটার জন্য কর্মকর্তাদের ‘প্রেসার’ (চাপ) দেয়ার পরও কাজ হচ্ছে না। নানা জটিলতা, আজ এই কমিটির মিটিং কাল ওই কমিটির সভা। নানা কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।’ ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট এই ৭০ জনকে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি। একই বিসিএসে উত্তীর্ণ আরও ৯১২ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি, যারা সবাই এরই মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু খাদ্য পরিদর্শকের ১৫০টি পদ এখনও শূন্য থাকলেও তারা নিয়োগ পাচ্ছেন না। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পিএসসির সুপারিশের মাত্র ৩৪ দিনের মাথায় সামরিক শাসনামলে করা নিয়োগ বিধিমালা অকার্যকর হয়ে যায়। নতুন নিয়োগবিধি না হওয়ার কারণেই এ নিয়োগ আটকে আছে। তবে এরই মধ্যে ওই ৭০ জনের পুলিশ যাচাই ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ বিধির খসড়া তৈরি করে সচিব কমিটির অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা দাবি করছেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় চাইলেই তাদের নিয়োগ দিতে পারে। প্রার্থীদের একজন মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, তিনি নিয়োগ না পেয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও এ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। বয়স না থাকায় নতুন করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টাও করতে পারছেন না। তাই অনেকটা নিরুপায় হয়েই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। একটি নিয়োগ বিধির অপেক্ষায় আমরা দুই বছর পার করে দিয়েছি।
প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, নিয়োগবিধির অজুহাতে তাদের নিয়োগ আটকে থাকলেও খাদ্য অধিদফতরের পদোন্নতি, বদলিসহ অন্য সব কাজই হচ্ছে। শুধু তারা ৭০ জনই দুই বছর ধরে বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। দুই বছরেও নিয়োগ না পাওয়ায় এদের বেশিরভাগেরই সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স পার হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, পিএসসি তাদের নিয়োগের সুপারিশ করার কারণে তারা নতুন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগও হারিয়েছেন। এই অবস্থায় তারা চাকরিতে যোগ দেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদফতর এবং পিএসসিতে দিনের পর দিন ঘুরছেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। হাতের নাগালে চাকরি পেয়েও সেই চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন এই ৭০ যুবক। নিয়োগ না পাওয়া ইসমাইল হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বেকারত্বের বোঝা আর টানতে পারছি না। জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে নিয়োগের সুপারিশ চেয়েছিল, পিএসসি তা করেছে। কিন্তু সুপারিশের পরও কেন নিয়োগ হচ্ছে না, সেটা মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরই ভালো বলতে পারবে। কোনো কারণে নিয়োগ না দেয়া গেলে সেটা দ্রুত সুরাহা করা প্রয়োজন। তবে প্রার্থীদের সঙ্গে এমন দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়।’ চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দিয়ে এক চিঠিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘নিয়োগ বিধিমালা না থাকার অজুহাতে যদি এই প্রার্থীদের চাকরি না দেয়া হয়, তবে তারা যেমন হতাশ হবেন, তেমনি দেশ মেধাবী কর্মকর্তাদের পাবে না। খাদ্য অধিদফতরের পরিদর্শক পদে শূন্যতার কারণে মন্ত্রণালয়েরও সমস্যা হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে ওই ৭০ জনকে দ্রুত নিয়োগ দেয়া উচিত।’

No comments

Powered by Blogger.