মৌলভীবাজারে বন্যা কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ

মঙ্গলবার রাত ও দিনে বৃষ্টি না হওয়ায় মনু নদীর পানি কমে মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তবে নিন্মাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। রাজনগর উপজেলার কামারচাক ও টেংরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষকে মঙ্গলবার বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পানিবন্দি থাকতে দেখা যায়। ফলে বন্যা কবলিত গ্রামের মানুষের মধ্যে বাড়ছে দুর্ভোগ। বাঁধে ও খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো ছেলেমেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে রমজান থাকায় সেহরি ও ইফতারের সময় মুসলমানদের অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আগামী ৫-৬ দিনের মধ্যে পানি কমে যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা। জলাবদ্ধতায় রাজনগর উপজেলায় ৭৪০ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ৫০ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে জেলার ৭টি উপজেলার জন্য ৪০ টন চাল ও নগদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। রাজনগর উপজেলার পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কামারচাক ইউনিয়নে ৪শ’ পরিবারের মধ্যে ১ কেজি চিঁড়া ও ১ কেজি গুড় এবং টেংরা ইউনিয়নের সাড়ে ৩শ’ পরিবারের মধ্যে ১ কেজি চিনি ও ১ কেজি গুড় বিতরণ করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু এগুলো পানিবন্দি মানুষের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়া রাজনগরের আল-ইখওয়ান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির উদ্যোগে কামারচাক ও টেংরা উইনিয়নের ২০টি গ্রামের পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। জুড়ী উপজেলা শহরের প্রধান প্রবেশপথ জুড়ী ডাকঘর সড়কের রেল সেতু এলাকা বানের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় গত ৪ দিন থেকে জুড়ী শহরের সঙ্গে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলা অংশে সৃষ্ঠ ৯টি ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। দুই উপজেলায় শতাধিক গ্রামে হাজার হাজার পরিবারের দুর্গত মানুষের মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সামান্য চিঁড়া-গুড় ছাড়া আর কোনো ত্রাণই পৌঁছায়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে চলছে হাহাকার। বন্যার পানি বাড়িঘর থেকে না নামায় মানুষ মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। ধলাই নদীর ৩টি ভাঙন দিয়ে সৃষ্ট বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার নিন্মাংশে এখনও পানিবন্দি রয়েছেন মানুষ। পুরো উপজেলায় বন্যাক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। পানিবন্দি অসহায়-দুর্গত মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ পানিসহ তীব্র খাবার সংকট রয়েছে।
৪ দিন ধরে নিন্মাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাদুর্গত এসব এলাকা পরিদর্শনে সরকারি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনেও তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ না হওয়ায় কমলগঞ্জ উপজেলার এক পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের বন্যাক্রান্ত অসহায় ১৪শ’ পরিবারের মধ্যে উপজেলা যুবলীগের পক্ষে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে এসব খাবার বিতরণ করা হয়। নবীগঞ্জে সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি : নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নতুন করে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে নবীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি গ্রাম। এতে প্রায় সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কুশিয়ারার পানি বাড়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীর পাড় ডুবে ও দীঘলবাক ইউনিয়নের নড়খাই নদী দিয়ে কুশিয়ারা থেকে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করে দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা, চরগাঁও গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, আউশ ধান, বিভিন্ন জাতের সবজি ক্ষেত, পুকুর ও মাছের ফিশারি (ঘের) তলিয়ে গেছে। অপরদিকে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ গ্রাম, নাদামপুর ও পঠানহাটি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফেঞ্চুগঞ্জে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি : ফেঞ্চুগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে মঙ্গলবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৭৪নং গেজ স্টেশন সূত্র জানায়। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সড়কসহ বাজারের একটি অংশ। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুরে জান্নাত বলেন, ফেঞ্চগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন ওয়াকিবহাল রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি মুহূর্তে অবহিত করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.