নির্বাচনী জোটের পথে বিএনপি

২০ দলীয় জোটের বাইরের সরকারবিরোধী ডান, বাম, মধ্যপন্থী দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কথা ভাবছে বিএনপি। এ আন্দোলন হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার দাবিতে। আর দাবি আদায় হলে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে হবে নির্বাচনী জোট। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ছোট ছোট রাজনৈতক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তবে দেশের চলমান বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে বিএনপি। আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক না করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন দলটির নেতারা। এই কৌশলের অংশ হিসেবে সোমবার বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটিতে রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে দেয়া ইফতারের আগ মুহূর্তে খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোটের বাইরের কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। এ আলোচনায় দেশের চলমান পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তাদের মনোভাব জেনে নেন খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচবি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আর এই ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুর হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা অনেকের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন। রমজানের পরে এ উদ্যোগে আরও গতি আনা হবে।
কৌশলগত কারণে ঘোষণা না দিয়েই এই প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে।’ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হতে না পারে সেজন্য সরকারের বাইরের ডান, বাম, মধ্যপন্থী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রথমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন হলে সে সরাকার দেশকে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা-সাম্য, মানবতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।’ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আগামী নির্বাচন কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে করা যায় তা নিয়ে তারা কমিশনের সেঙ্গ আলোচনা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতি দেশি-বিদেশি শক্তিগুলোরও আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণেই দলটি সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, এবারের নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলেই বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করবে। সেক্ষেত্রে সবার আগে দলটি সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা চায়। এজন্য জুলাই-আগস্ট মাসের যে কোনো সময় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন খালেদা জিয়া। তবে রূপরেখা দেয়ার সময়ও খালেদা জিয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে শেষবারের মতো দেশের সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন। জানা গেছে, রূপরেখা প্রণয়নে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতও নেয়া হচ্ছে। এজন্য গোপনে সরকারের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনাও চালাচ্ছে বিএনপি। দলগুলো মধ্যে আছে- ডা. একিউএম বদরুদ্দোজ্জার বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আসম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, সিপিবি-বাসদসহ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করা ছোট-বড় দল। শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। যাতে করে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার পর নানা দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
 তবে খালেদা জিয়ার ওই আহ্বানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাড়া না দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল এতে আগ্রহ দেখালেও শুধু কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ছাড়া অন্য কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রক্রিয়া ওখানেই থেমে যায়। বিএনপি নেতারা মনে করেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিতে অনেকে এগিয়ে এলেও পরে সরকারের নানা চাপের কারণে সংশ্লিষ্টরা পিছিয়ে যায়। এ কারণে এবার ঢাকঢোল না পিটিয়ে গোপনে কাজটি করতে চাইছেন তারা। প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক নেতা জানান, দৃশ্যমান ঐক্য না হলেও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পথে থাকাই এখন বিএনপির লক্ষ্য। যুগপৎ আন্দোলনের ফলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় হলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে। অর্থাৎ একটি নির্বাচনী জোট হবে। যে জোট আগামীতে একটি সরকার গঠন করবে। প্রায় একই সুরে কথা বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতা বরিশাল মহানগরের সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, খুলনা জেলা সভাপতি শফিকুল আলম মনা, রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। তাদের মতে, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আজ ঐক্যবদ্ধ। তাদের বিশ্বাস, সব গুছিয়ে চেয়ারপারসন যদি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে নামেন, তাহলে তা মানতে সরকার বাধ্য হবে। এ দাবিতে দেশের সাধারণ মানুষকেও পাশে পাওয়া যাবে। কারণ সরকারের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে ঠেকেছে।

No comments

Powered by Blogger.