ব্যাংক হিসাবের বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি খোদ মন্ত্রীর

ব্যাংক হিসাবের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার ও সঞ্চয়পত্রের সুদ না কমানোর এবার দাবি জানিয়েছেন সরকারের এক দায়িত্বশীল মন্ত্রী। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরাও অর্থমন্ত্রীর এ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বুধবার সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ দাবি জানিয়ে বলেন, সঞ্চয় এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ওপর কর আরোপ করা ঠিক হবে না। সাধারণ মানুষ, স্বল্প বেতন পাওয়া মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। এখানে শুল্ক আরোপ করা ঠিক হবে না। নিম্ন আয়ের মানুষকে অব্যাহতি দিয়ে ধনাঢ্যদের ওপরে কর আরোপ করা হোক। মোজাম্মেল হক বলেন, আমি কেবিনেটের সদস্য। কেবিনেটে এই বাজেট পাস হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কথা বলা নৈতিকতা বিরোধী। তবে আমি জনগণের ভোটে নির্বাচিত। তাদের কথা বলতে হবে। এদিকে বাজেটে এই বর্ধিত আবগারি শুল্কের সমালোচনার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের চরম অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মঙ্গলবার এক ইফতার অনুষ্ঠান থেকে দাবি করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ২০১৬ সাল ছিল আওয়ামী লীগের ব্যাংক চুরির বছর। ব্যাংকের টাকা প্রতিনিয়ত চুরি করেছে, চুরি করতে করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি করেছে, ব্যাংকের টাকা চুরি করে তারা পাচার করেছে। বিএনপি নেত্রীর এ মন্তব্যের জবাবে সংসদে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, খালেদা জিয়া আর তার পুত্র যে কাজে পারদর্শী, সেই কথাই উনি বলবেন। কিন্তু কিভাবে চুরি হল সেটা বলতে পারেননি। উনার মাথা খারাপ, উনাদের সময় ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট হত। আর এখন ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়। দেশের উন্নয়নের খবর রাখে না বলেই খালেদা জিয়া ইচ্ছামতো কথা বলছেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যত বধ্যভূমি আছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ হয়েছে সব জায়গায় একই ধরনের স্মৃতিস্তম্ভ করা হবে। সব মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ডিজাইনে করার প্রকল্প পাস হয়েছে। যাতে ১০০ বছর পরেও নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারে এটা একটা মুক্তিযোদ্ধার কবর। পাকিস্তানি ও রাজাকারদের ঘৃণ্য কাজ স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য ঘৃণাস্তম্ভ করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে মানুষ ঘৃণা জানাতে পারে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করার জন্য প্রতি জেলা-উপজেলায় স্মৃতিস্তম্ভ করার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এরআগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি। তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলকে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অনেক মধ্যবিত্ত সন্তান পড়ে। এই প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনলে একটা বৈষম্যের বিষয় এসে যেতে পারে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি ক্লিনটনের যোগসাজস তদন্তে দেশটির উদ্যোগের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে হিলারি ক্লিনটন কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল সে বিষয়ে তাদের সিনেট কমিটি তদন্ত করছে। পশ্চিমা বিশ্ব কিছু কিছু দেশে তাদের ডমিনেশন প্রতিষ্ঠার জন্য লোক খুঁজে বেড়ায়। আমাদের দেশে কিছু মানুষ বসে থাকে, তারা সেই তল্পিবাহক হবেন এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবেন। পশ্চিমা প্রভুদের তল্পিবাহকরা আর কেউ নয়, এরা নব্য মীরজাফর। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দীপু মনি বলেন, পশ্চিমা প্রভুদের তল্পিবাহকরা আর কেউ নয়, এরা নব্য মীরজাফর। এদের ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত হিসাবকে লুটপাটের বাজেট বলায় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করেন দীপু মনি। তিনি বলেন, লুটপাট যাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত তারাই এ কথা বলছেন। তিনি ও তার অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করেছিলেন। তার ছেলেরা বিদেশে টাকা পাচার করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। তাদের আমলে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক টাকা প্রত্যাহার করেছিল। কই তারা তো চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। আমাদের আমলে পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। বিশ্বব্যাংক অভিযোগ তো প্রমাণ করতে পারেনি, উল্টো ভুল স্বীকার করে তারা এখন বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নে ফিরে এসেছে। দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের কোনো দুর্নীতি থাকলে সরকার এই অনঢ় অবস্থানে থাকতে পারতেন না। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখন মানুষ ইফতারের আগে দোয়া দরুদ করেন, তখন তিনি চূড়ান্ত মিথ্যাচার করেন। আল্লাহ মাফ করুন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের পকেটে হাত দিয়েছেন। তারা মানুষের পকেটে না শুধু, মানুষের গলায় হাত দিয়েছিল। তাদের আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৮৫ ডলার, আজকে তা ১৬০২ ডলার। কয় টাকা পাবেন, আতঙ্ক তো সারাদেশে ধরিয়ে দিলেন এক লাখ টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়াতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন সংসদে সরকারি দলের সদস্য আলী আশরাফ। পাশাপাশি সব পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। আজ বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সমালোচনা করে আলী আশরাফ বলেছেন, আজকের সময়ে এক লাখ টাকা কোনো টাকাই নয়। ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক আরোপ না করার দাবি জানান। নিত্যপণ্য ছাড়া সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব সঠিক হয়নি বলেও মনে করে আলী আশরাফ বলেন, ‘ভ্যাট নিয়ে আপনি এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা আমাকে বলেছেন, যে তাদের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে। আপনি কথায় কথায় একসাইটেড না হয়ে শাšভাবে বসেন। মূল্য সংযোজন কর নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেন। তিনি বলেন, ‘বাজেট যত বড়ই হোক, যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে এর কোনো অর্থই হয় না। এটাকে বাস্তবায়ন করার মধ্যেই কৃতিত্ব। এটাকে বাস্তবায়ন করতে আপনি কথা বলুন, আরও কথা বলে একে স্বচ্ছ করুন, স্বচ্ছ হলেই তো এটা বাস্তবায়ন হবে। আর বাস্তবায়ন না হলে তো এটা অর্থহীন হবে।

No comments

Powered by Blogger.