পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার মোহাম্মদপুরে

‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙ্গায় ভইরা লইয়া যায়’ রমজান মাসে এ হাঁক-ডাক চকবাজারে নিত্যদিনকার। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হল এ ডাক এখন শুধু পুরান ঢাকার চকবাজারে নয়- শোনা যাচ্ছে মোহাম্মদপুরেও। আর সেটা শুনতে হলে যেতে হবে মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ারের কনভেনশন সেন্টারের ইফতার বাজারে। আর শুধু বড় বাপের পোলা নয় পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নানা ইফতার সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে এখানে। রাজধানীর অন্যতম আবাসিক এলাকা মোহাম্মদপুর। এখানে খুব বেশি খাবারের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট না থাকলেও যেগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই রুচিসম্মত এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করে। রমজান মাসে এখানে মোড়ে মোড়ে ইফতারির দোকান না থাকলেও যে কয়েকটি আছে সেগুলো মানসম্মত খাবার পরিবেশন করে থাকে। আর এখানে রমজান উপলক্ষে টোকিও স্কয়ারে সবচেয়ে বড় ইফতার বাজার বসেছে যেখানে ঐতিহ্যবাহী সব ধরনের ইফতারি সংগ্রহের পাশাপাশি ইফতারও সেরে নেয়া যাচ্ছে। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির পাশেই টোকিও স্কয়ার। এখানকার কনভেনশন সেন্টারেই বসেছে এ এলাকার ইফতার বাজার। একই ছাদের নিচে অনেকগুলো খাবারের দোকানে ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেছে। মঙ্গলবার বিকালে সেখানে যেতেই শোনা গেল ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ ডাক। এখানকার জারাহ ইফতার বাজারের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে এ খাবার। তবে পুরান ঢাকার তুলনায় এখানে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ খাবারটির দাম রাখা হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। চকবাজারে ‘বড় বাপের পোলার’ দাম কেজিপ্রতি ৪০০ টাকা। আর এখানে কেজিপ্রতি দাম রাখা হচ্ছে ১০০০ টাকা। আর বড় প্যাকেজ ৫০০ ও ছোট প্যাকেজ ২৫০ টাকা। এ স্টলে আরও আছে চিকেন সাসলিক, চাপ, পাকোড়া, কিমা পরোটা, টানা পরোটা ইত্যাদি।
ইফতার বাজারের আরেক স্টল ফুল প্লেট ক্যাটারস। এখানে চিকেন কাবলি ১০০-২২০ টাকা, দইবড়া প্রতি পিস ২৫ টাকা, চিকেন সাসলিক ৬০ টাকা, প্রনরোল প্রতি পিস ২৫ টাকা, চিকেনলেগ গ্রিল প্রতি পিস ৬০ টাকা, আফগানি বিফ প্রতি পিস ৯০ টাকা, গরুর মাংসের খিচুড়ি প্রতি প্লেট ১২০ টাকা, মোরগ-পোলাও প্রতি প্লেট ১৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। মাস্টার শেফ সুবরাত আলীর স্টলেও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী খাবার। এখানে চিকেন রোল ফুল ৪৫০ টাকা, গরুর হান্ডি কাবাব প্রতি কেজি ১০০০ টাকা, কালা ভুনা প্রতি কেজি ১০০০ টাকা, মাটন লেগ রোস্ট প্রতি পিস ১২০০ টাকা, বিফ নার্গিস প্রতি পিস ৫০ টাকা, কাচ্চি বিরিয়ানি ফুল ৩২০ টাকা ও হাফ ২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও আছে গরুর তেহারি ফুল ২২০ ও হাফ ১৭০ টাকা। গরুর হালিম ২০০-৫০০ টাকা। একই জায়গায় কারি হাউসে বিফ তেহারি প্রতি প্লেট ১৭০ টাকা, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি প্রতি প্লেট ১৭০ টাকা, চিকেন ফুল রোস্ট ৩৫০ টাকা, মাটন লেগ রোস্ট ২০০ টাকা, চিকেন রোস্ট প্রতি পিস ১০০ টাকা, গরুর হালিম ১৫০-৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ইকবাল হোসেন ক্যাটরিংয়ে বিক্রি হচ্ছে শুধু আলু বোখারার চাটনি ও ঘি। খান ক্যাটরিং সার্ভিসে আছে বিফ কালিয়া প্রতি কেজি ১০০০ টাকা, বিফ রেজালা প্রতি কেজি ১০০০ টাকা, তান্দুর চিকেন ৯০ টাকা, চিকেন মাসালা ১০০ টাকা। এ ছাড়াও ভিক্টাস কিচেনের স্টলে ইফতারির ছয়টি সেট মেন্যু পাওয়া যাচ্ছে। এ সেট মেন্যু প্যাকেজের মূল্য ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা। টোকিও স্কয়ারের এ ইফতার বাজারটি মার্কেটের ভেতরে হওয়ায় খোলা নয়। যে কারণে বাইরের ধুলোবালি এখানে কমই আসে। টোকিও স্কয়ারের ঠিক উল্টো দিকে রাস্তার ওপাশে প্রিন্স সুইটস অ্যান্ড বেকারি। এখানে বেশ মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। তাদের ইফতারির মধ্যে রেশমি জিলাপি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, মাটন লেগ রোস্ট ৩৫০ টাকা, দইবড়া প্রতি পিস ৬০ টাকা, বিফ জালি কাবাব ৫০ টাকা, চিকেন সুমাই ১৫ টাকা, গ্রিল চিকেন ১০০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ৫০ টাকা, স্প্রিং রোল ২৫ টাকা এবং খাসির হালিম ১০০-৪৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে একটু সামনে এগুলেই কেএফসির একটি আউটলেট আছে। এ ছাড়াও মোহাম্মদপুর এলাকায় এইচ অ্যান্ডসি, বিএফসি, শর্মা ভিলেজ, লাউঞ্জ ক্যাফে, সিটিপার্ক চাইনিজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে বাহারি স্বাদের ইফতারি পাওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.