থ্রিপিস পাঞ্জাবি শাড়িতে নতুনত্বে নজর

পবিত্র রমজান শুরু মানে শুরু ঈদের কেনাকাটাও। আর সময় যত এগিয়ে আসছে শপিংমল বা মার্কেটগুলোতেও ততটাই বাড়ছে ভিড়। এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে এ ভিড় আরও বেশি। এখানকার বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ফ্যাশন হাউসের শোরুমগুলোও সেজেছে বাহারি পণ্যে। তবে ক্রেতাদের নজর বেশি নতুন ডিজাউন ও নামের থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, শাড়ি ও গাউনে। এই নতুনত্বে এবার যোগ হয়েছে জনপ্রিয় কয়েকটি ভারতীয় সিনেমার নাম ও চরিত্র। বাহুবলী, রইস, সুলতান যেন এবারের ক্রেজ। কয়েকটি ব্র্যান্ডের কর্মকর্তা ও বিক্রয়কর্মীর মুখেও সেই কথা। ফ্যাশন হাউস হায়া’র ম্যানেজার জাকিউল ইসলাম জানান, বাহুবলী ছবির নায়িকা তামান্না ভাটিয়া ছবিতে যে গাউন পরে অভিনয় করেছেন ওই ধরনের গাউন আমরা ভারত থেকে আমদানি করেছি। আর রইস ছবিতে শাহরুখ খানের পরনে যে কাবুলি স্যুট ছিল সেই ধরনের স্যুট, শেরোয়ানিও এনেছি। ক্রেতারা সানন্দে এসব কিনছেন। কেউ কেউ পরে কিনবেন জানিয়ে দেখে যাচ্ছেন। জাকিউল আরও বলেন, এছাড়া ভারতের প্রখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার সঙ্গিতা শিবরানি, মনিষ মালহোত্রার ডিজাইন করা গাউন, খ্যাতনামা পাঞ্জাবির ডিজাইনার অমিতের পাঞ্জাবি-শেরোয়ানিও আছে। ক্রেতারা এসবও কিনছেন। এক বিক্রয়কর্মী জানান, বাহুবলী থ্রি-পিসের দাম ৭ হাজার টাকা। আর গাউন কিনতে হলে খরচ করতে হবে ২০ হাজার। গাউনে ডিজাইন বেশি হলে দাম ৫০ হাজার টাকাও ছাড়িয়ে যাবে। রইসের শেরোয়ানি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু। ফ্যাশন হাউস মেট্রোতে গিয়ে দেখা গেল ঠাসা ভিড়। এখানকার কর্মকর্তা আবদুল্লাহ জানান, ঈদ উপলক্ষে আমরা ব্যাপক কালেকশন এনেছি। প্রায় সবই আনকমন। ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নতুন ও আনকমন পোশাকই বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। আবদুল্লাহ আরও বলেন, স্টোন, স্টোন কেপ, পাকিস্তানি পার্ল, পাকিস্তানি কেপ ইত্যাদি থ্রি-পিস আমরা এবার রেখেছি। ৭ থেকে ১৭ হাজার টাকা মূল্যের বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের এসব থ্রি-পিস কিনতে ক্রেতাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন ধরনের গাউন, কুর্তি এসবও রেখেছি। সুতি, সিল্ক, সামু সিল্ক, স্টিচ, আনস্টিচ কুর্তিও ভালোই চলছে। সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে পাঞ্জাবিরও বাহারি কালেকশন রয়েছে আমাদের। ইনফিনিটির কালেকশনে রয়েছে নতুনত্ব। আদি কটন, অ্যাম্বুস ও কাতান পাঞ্জাবি এখানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ’ সাড়ে ৯ হাজারের মধ্যে। দেশি জর্জেট, কাতান, সিল্ক, সুতি প্রিন্ট শাড়ি ১ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। শার্ট ও থ্রি-পিসেরও বিপুল আয়োজন। ব্রাঞ্চ ইনচার্জ সাইফুদ্দিন জানান, লিমিটেড এডিশন নামের পাঞ্জাবিটি এ বছরই বাজারে এসেছে। এটাতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে ততই বিক্রি বাড়ছে। জেন্টেল পার্কে গিয়ে দেখা যায়, স্লিমফিট ও এক্সিকিউটিভ পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায়। ক্যাজুয়াল (প্রিন্ট, চেক, এক কালার), স্লিম ফিট, ফরমাল শার্ট দেড় হাজার থেকে ১৯শ’ টাকার মধ্যে। এছাড়া রয়েছে হরেক রকম টি-শার্ট এবং জিন্স, গ্যাবার্ডিন ও ফরমাল প্যান্টও। শোরুমের ম্যানেজার মামুন সরকার জানান, গরম থাকায় সুতি ও হালকা কালারের প্রতি ক্রেতাদের ব্যাপক আকর্ষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রাস্টমার্টে রয়েছে শাড়ির বিপুল সমাহার। সুলাকসামি (সিল্ক, সুতি, জর্জেট), নাক্কাসি, রাজগুরু, ভিনয়, ইন্ডিয়ান কাতান শাড়ি ৩ থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখানে।
থ্রি-পিসেও রয়েছে বৈচিত্র্য। শারারা, বোম্বে ফ্যাশন, দিল্লি ফ্যাশন, ভিনয় জর্জেট, পাকিস্তানি নুর কটন ও মাজান কটন, বারিজ পিয়র শিফন ইত্যাদি থ্রি-পিস মিলছে সাড়ে তিন থেকে ১৪ হাজার টাকায়। ক্রেতারা এসব পছন্দ করছেন। ক্যাটস আইয়ের ম্যানেজার সাইফ উদ্দিন বলেন, এবার ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবি, প্রিন্টের শার্ট, মেয়েদের টপস আনা হয়েছে। এছাড়া ক্যাটস আইয়ের ফরমাল শার্ট আছে ছেলেদের জন্য। নীল আঁচল শোরুমে দেখা মিলল ভারতীয় শাড়ির বিশাল কালেকশন। আছে দেশি শাড়িও। নির্দিষ্ট আইটেমের শাড়িতে ৪০যশতাংশ ছাড়ও দেয়া হয়েছে। শোরুমের সেলস ম্যানেজার খোরশেদ আহমেদ বাবু বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সব শ্রেণী-বয়সী নারীদের জন্য দেশি-বিদেশি শাড়ির সমারোহ ঘটানো হয়েছে। দেশীয় শাড়ির মধ্যে আছে তাঁতের শাড়ি, মিরপুরের কাতান ইত্যাদি। এগুলোর দাম ১ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। ভারতীয় শাড়ির মধ্যে আছে চেন্নাই কাতান, কাঞ্জিভরম, ইককাত কাতান, শিফন, প্রিন্টেড সিল্ক। এসবের দাম ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।’ ক্রেতারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমলে কেনাকাটা করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ বিশাল মার্কেট। অনেক স্পেস। অনেক বড় বড় দোকান। একসঙ্গে সব ব্র্যান্ডের পণ্য পাওয়া যায় এক ছাদের নিচে। দামাদামির ঝামেলা নেই। সবকিছু একদরে পাওয়া যায়। সব শ্রেণীর ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করার সুযোগ আছে। আন্তর্জাতিক মানের শপিংমল হলেও এখানে সব পণ্যই সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। যশোর থেকে আসা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে আগেভাগেই কেনাকাটা করতে এসেছি। বাসে কিংবা ট্রেনে ভিড় হওয়ার আগেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে চাই। তার আগেই কেনাকাটা শেষ করতে চাই। তাই সবাইকে নিয়ে এই শপিংমলে এসেছি।’ বরিশাল থেকে এসেছেন জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রিয় ব্র্যান্ডের পোশাক শেষ হওয়ার আগেই কেনাকাটা করতে এসেছি যমুনা ফিউচার পার্কে। এখানে কেনাকাটার পাশাপাশি সব বয়সীদের জন্য রয়েছে বিনোদনের সুযোগ। এসব কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ শপিংমলে মানুষ আসে।’ রাজধানীর নিকুঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে মঙ্গলবার যমুনা ফিউচার পার্কে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী দীপন চাকমা। তিনি বলেন, এখানে নতুন নতুন কালেকশন পাওয়া যায়। দামও সেই তুলনায় খুব বেশি নয়। হাতের নাগালেই রয়েছে। তাই সাধ্যের মধ্যেই কেনাকাটা করলাম। সিদ্ধেশ্বরী থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সালাহ উদ্দিন হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে যখন বাড়ি ফিরছিলেন ঠিক সেসময়ই কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এই মার্কেটে কী নেই। একজন মানুষের যা যা প্রয়োজন, সবই এখানে পাই। কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না জানান, ঈদের কেনাকাটা করতে আগে আমরা সপরিবারে দেশের বাইরে যেতাম। এখন যমুনা ফিউচার পার্কেই আমাদের প্রয়োজন মিটে যায়। তাই আর বিদেশে যাই না। বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের পোশাক ও ভারতীয় ডিজাইনারদের ডিজাইন করা পোশাক এই মলের কয়েকটি শোরুমে পাওয়া যায়। বিদেশে না যাওয়ায় বেঁচে যাওয়া বিমান ভাড়ার টাকায় বাড়তি পণ্য কিনি।

No comments

Powered by Blogger.