আর ভুল করবেন না নির্বাচনে অংশ নিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন- হত্যা, লুটপাট ও দুর্নীতির রাজনীতি বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকুক। আমরা চাই তারা (বিএনপি) পুনরায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার মতো ভুল না করুক। বরং আমরা চাই তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং জনগণ বিচার করবে কারা ক্ষমতায় আসবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের সিটি কনফারেন্স সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সুইডেন সফর শেষে আজ দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া দেশের কোনো উন্নয়নে স্বস্তিবোধ করেন না এবং তিনি সর্বদা দেশের ধ্বংস দেখতে চান, উন্নয়ন নয়। ‘বাংলাদেশ খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে’- খালেদা জিয়ার এ মন্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না বরং যারা এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে ও যারা মামলার মুখোমুখি হতে ভয় পায় এবং দেড়শ’বার রিট দাখিল সত্ত্বেও উচ্চ আদালতে মামলায় হেরেছে তাদেরই দুর্দিন যাচ্ছে। ‘দেশের মানুষ যখন ভালো থাকেন বিএনপি নেতা তখন স্বস্তি অনুভব করেন না’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা স্বস্তি অনুভব করেন যখন তারা লোকদের হত্যা করেন এবং দেশের সম্পদ ধ্বংস করেন। তিনি বলেন, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন হাওয়া ভবন খুলে জনসাধারণের অর্থ লুট করেছে এবং অবাধে দুর্নীতি করেছে। খালেদা জিয়া শুধু লুট ও কমিশন নেয়া জানে এবং তারা কেবল জানে কিভাবে সম্পদ ধ্বংস করতে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পুনরায় জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, বিএনপি নেতারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানের সঙ্গে যুক্ত। তারা আমার জীবন নাশের কয়েকবার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি রাজনীতি, দেশ এবং জনগণের স্বার্থে এই ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি হত্যা ছাড়া অন্য কিছুই বোঝে না এবং ধ্বংসের বাইরে কোনো কিছুই জানে না। দেশবাসীর ওপর বিএনপি যে নির্যাতন চালিয়েছে, জনগণ তা ভুলবে না। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের সামনে বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জনগণকে অবহিত করতে হবে যে, বিএনপি একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। জনগণের সামনে তাদের চরিত্রকে উন্মোচিত করতে হবে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরোধী সরকারের প্রচার কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীরা দেশের কোথাও স্থান পাবে না। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এই ধর্ম কখনও নিরীহ মানুষ হত্যার সমর্থন দেয় না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জঙ্গিবাদবিরোধী অভিযানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অভিযানে যখন কোনো জঙ্গি নিহত হয় বিএনপির চেয়ারপারসন মায়াকান্না করেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের তহবিল বন্ধে ভূমিকা রাখা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ হারানোর পর ফোন করে হিলারি ক্লিনটনকে প্ররোচিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার হুমকি দেয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তীব্র নিন্দা জানান শেখ হাসিনা। গত আট বছরে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ এখন সাধারণ মানুষের হাতে হাতে এবং তারা দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত শাসনকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল কম। তারা জনগণকে বিদ্যুতের খাম্বা দিয়েছে। বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সাহায্য তহবিল লুট করেছে, তারা জনগণকে দরিদ্র রাখতে চেয়েছে এবং তারা দেশকে দুর্দশাগ্রস্ত ও মানুষের মৃতদেহ দেখিয়ে আরও বিদেশি সাহায্য নিয়ে আসতে চেয়েছে। তিনি বলেন, অপরদিকে আওয়ামী লীগের নীতি হল দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো, অন্যের কাছ থেকে ভিক্ষা গ্রহণ নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মর্যাদার সঙ্গে বাস করব। তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি সুইডিশ রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সফল হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। সুইডেনের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিন্ন সমৃদ্ধি ও দু’দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়নে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদার হতে সুইডেনের বাণিজ্য ও শিল্প নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সকালে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রোজেনব্যাড সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ-সুইডেন বিনিয়োগ ফোরামের বাণিজ্য সংলাপে ভাষণকালে এ আমন্ত্রণ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি খুবই উদার। এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। আমরা ইইউ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে এবং এ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল জিটুজি ভিত্তিতে বিশেষভাবে চীন, ভারত ও জাপানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা অনেক হাইটেক পার্কও গড়ে তুলছি- আমি আমাদের উন্নয়ন প্রয়াসে অংশীদার হতে সুইডেনের কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সুইডেনের এন্টারপ্রাইজ ও ইনোভেশন মন্ত্রী বক্তব্য দেন। এ ছাড়া এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলামও বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং শ্রম সচিব মাইকেল শিফার প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সুইডেনের ব্যবসায়ী নেতা এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিন দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল, স্টকহোম এবং নরডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সুইডেনের এন্টারপ্রাইজ ও ইনোভেশন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুৎ ও তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে দুই সুইডিশ কোম্পানির আগ্রহ : শীর্ষস্থানীয় দুটি সুইডিশ কোম্পানি দি ইনভেস্টর এবি এবং এবিবি সুইডেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। শুক্রবার সকালে গ্র্যান্ড হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক সাক্ষাৎকালে এ আগ্রহের কথা জানান ইনভেস্টর প্রেসিডেন্ট জ্যাকব ওয়ালেনবার্গ, ইনভেস্টর ভাইস প্রেসিডেন্ট মারকাস ওয়ালেনবার্গ এবং এবিবি সুইডেনের জন সোডারস্টর্ম। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, ইনভেস্টর এবি এবং এবিবি সুইডেনের শীর্ষ নির্বাহীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশের সমৃদ্ধি এবং ব্যাপক আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী তৈরি পোশাক পণ্যের মূল্য বাড়ানোর জন্য বায়ারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রকৃতপক্ষে এতে শ্রমিকরাই লাভবান হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক, সুইডেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার, বাংলাদেশে সুইডেনের রাষ্ট্রদূত যোহান ফ্রিসেল, এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এবং বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরছেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের সুইডেন সফর শেষে যুক্তরাজ্য হয়ে আজ দেশে ফিরবেন। ফেরার পথে সিলেটে যাত্রাবিরতি করবেন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন হয়ে ঢাকার উদ্দেশে স্টকহোম ত্যাগ করেন। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় লন্ডনের উদ্দেশে সুইডেনের অরল্যান্ড বিমানবন্দর ত্যাগ করে। সুইডেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারোয়ার বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান। সিলেট ব্যুরো জানায়, আজ সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পথে সিলেটে এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করবেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে শুক্রবার বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে এক সভা হয়। এতে বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় প্রশাসন, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.