তুলে নেয়ার দেড় মাস পর ফিরলেন শহীদুল্লাহ

ডিবি পরিচয়ে বাড়ি থেকে তুলে নেয়ার দেড় মাস পর পরিবারের কাছে ফিরেছেন ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দা মাওলানা শহীদুল্লাহ। চোখবাঁধা অবস্থায় রাস্তয় ফেলে যাওয়ার পর বুধবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বাসে করে ময়মনসিংহে পৌঁছান ইত্তেফাকুল ওলামার বৃহত্তর মোমেনশাহী শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ।
গত ২৫শে এপ্রিল ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নেয়া হয় স্থানীয় কওমি মাদরাসা ‘ছাওতুল হেরা’র শিক্ষক শহীদুল্লাহকে। এরপর সন্ধান চেয়ে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন, সহকর্মী ও সমব্যথীদের বিক্ষোভ সমাবেশ, আলটিমেটামের পরও খোঁজ মিলছিল না তার। বুধবার ইফতারের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় চোখবাঁধা অবস্থায় তাকে রেখে যায় কিছু লোক। এরপর সেখান থেকে একটি বাসে রাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহের বাসায় ফেরেন তিনি। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুহিববুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল হকসহ নেতারা তার বাসায় গিয়ে কুশলবিনিময় করেন।
মাওলানা শহীদুল্লাহ তার সংগঠনের নেতাদের জানান, ২৫শে এপ্রিল ডিবি পরিচয়ে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে চারদিন এক জায়গায় রাখা হয়। সেখানে তাকে তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। মারধর বা অশোভন আচরণও করা হয়নি। চারদিন পর চোখ বেঁধে একটি ছোট কামরায় হ্যান্ডকাফ পরানো অবস্থায় রাখা হয় তাকে। দেয়া হয় স্বাভাবিক খাবার।
শহীদুল্লাহ সরকার জানান, বুধবার ইফতারের পর তাকে একটি গাড়িতে তুলে দিয়ে একজন বলে, ‘খোঁজ-খবর নিয়েছি। তুমি কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। তাই ছেড়ে দিচ্ছি।’
বেশ কিছু সময় পর গাড়ি থামিয়ে তাকে নামানো হয়। চোখবাঁধা অবস্থায় রাস্তার কিনারায় নিয়ে প্রস্রাব করার ভান করে বসতে বলে। এরপর দুই হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলে, ‘সামনে খিলক্ষেত। বাসে উঠে বাড়ি চলে যাও।’
খিলক্ষেতে ফেলে যাওয়ার পর মুঠোফোনটিও রেখে দেয়া হয় জানিয়ে শহীদুল্লাহ বলেন, তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে বসেছিলেন। পরে বাসে উঠে এক যাত্রীর মুঠোফোন থেকে স্ত্রীকে ফোন করে মুক্ত হওয়ার কথা জানান। শেরপুরগামী বাসটি রাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের পাটগুদাম সেতুর মোড়ে এসে থামলে স্বজনরা তাকে বাসায় নিয়ে যান।
স্বামীকে ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে মাওলানা শহীদুল্লাহ সরকারের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার স্বামীকে জীবিত পেয়েছি। এজন্য আমি ও আমার পরিবার আনন্দে আত্মহারা। মহান আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
‘বুধবার রাত ১২টার দিকে আমার মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনটি রিসিভ করতেই বলে, শাহনাজ, আমি জীবিত। আপনি কে জানতে চাইলে বলে, ভুলে গেছো? আমি তোমার স্বামী। তখনো বিশ্বাস হয়নি আমার স্বামী তিনি। আমি সন্তানদের ডেকে সুখবর দেই আর সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর আমার দুই ভাইকে পাঠাই তাকে বাসায় নিয়ে আসতে।’
শাহনাজ জানান, তার স্বামীর শরীর খুব দুর্বল। কথা বলতেও কষ্ট হয়। তাকে নিয়ে এখন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বালিয়াপাড়ায় রয়েছেন।
এতদিন তার স্বামী কোথায়, কীভাবে ছিলেন, কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইতে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘সুস্থ হলে জানতে চাইবো।’
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়েছি তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আমরা পরে তার সঙ্গে কথা বলবো।’
২৫শে এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার দিকে ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে মাওলানা শহীদুল্লাহ সরকারকে শহরের খাগডহরের নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাওলানা শহীদুল্লাহর মাকে সকালে ডিবি অফিসে খোঁজ নিতে বলে যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলেও কেউ তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.