লণ্ডভণ্ড রাঙ্গামাটিকে পুনর্গঠনে প্রাণপণ চেষ্টা

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লণ্ডভণ্ড রাঙ্গামাটিকে পুর্নগঠনে চলছে  জোর তৎপরতা। জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, পৌরসভাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরগুলোসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ইতোমধ্যেই ভয়াবহ এই দুর্যোগ পরবর্তী তিনদিনের মাথায় শহরে চালু করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।
বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যেও জেলা প্রশাসনের ত্রাণ অফিস থেকে পাঠানো হয়েছে ত্রাণ সহায়তা। অপরদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতির কারণে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হওয়া রাঙ্গামাটির বাজারগুলোতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান গতকাল শহরের সব বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে জরুরি সভা করেছেন। তাদের বলা হয়েছে, মানবিক বিপর্যয়ের এই পরিস্থিতিতে  কোনো বাজারে কেউ যদি কোনো পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। ব্যবসায়ী নেতারা জেলা প্রশাসককে আশ্বাস দিয়েছেন। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শহরের বাজারগুলোতে মোবাইল কোর্টের অভিযান শুরু করেছে। এতে করে শহরে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং হু হু করে বাড়তে থাকা দামের গতিও কমে আসে। ফলে বিপর্যস্ত রাঙ্গামাটিবাসী উচ্চমূল্যের ছোবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। অন্যদিকে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রাঙ্গামাটির সাথে চট্টগ্রামসহ বাইরের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল্প উপায়ে চালু করার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া শহরের পানি সংকট মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে একটি বড় জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। এই জেনারেটর এলে শহরে আংশিকভাবে পানি সরবরাহ চালু করা যাবে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে। এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঢাকা থেকে আরেকটি বড় জেনারেটর রাঙ্গামাটি পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান। তিনি জানিয়েছেন, এই দু’টি বড় জেনারেটর রাঙ্গামাটি আসার পর চালু করা সম্ভব হলেই পানি সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে। তবে আপাতত পৌরসভা, ফায়ার সার্ভিস, উন্নয়ন বোর্ড এবং সওজ’র পানির ভাউচারগুলো দিয়ে শহরের পানি সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কপথ বিচ্ছিন্ন থাকায় ৫৭ বছর আগে কর্ণফুলী নদী হয়ে কাপ্তাই থেকে চলাচলের নৌপথটি গতকাল আবার চালু করা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই এই রুটে লঞ্চ চলবে। চট্টগ্রাম থেকে মানুষ সড়কপথে কাপ্তাই আসছে এবং সেখান থেকে লঞ্চে করে আসতে পারছে রাঙ্গামাটি। আবার একইভাবে রাঙ্গামাটি থেকে লঞ্চে কাপ্তাই যাচ্ছে এবং সেখান থেকে বাসে বা অন্য কোনো উপায়ে যেতে পারছে চট্টগ্রাম।
রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানিয়েছেন, সড়ক পথ চালু না হওয়া পর্যন্ত স্থবির হয়ে যাওয়া জনজীবনকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে আমরা রাঙ্গামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের উক্ত রুটে আপাতত দৈনিক দুইটি যাত্রীবাহী লঞ্চ চালু করার জন্যে বলে দিয়েছি। সকাল নয়টায় একটি এবং বিকেল তিনটায় রাঙ্গামাটি থেকে এবং একই সময়ে কাপ্তাই থেকেও ছেড়ে আসবে দুইটি লঞ্চ। পুলিশ সুপার বলেন, এতে করে নৌ পথ ব্যবহার করে হলেও অত্রাঞ্চলের জনসাধারণ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারবে। আশা করছি, এর ফলে মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমবে। এদিকে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া দুর্গত লোকজনের খাদ্য সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ বিভাগ, ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের মতো সংগঠনগুলোসহ সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে এসেছে। গতকালও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে শিশু একাডেমী ও পুলিশ লাইন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া অন্তত সাড়ে তিনশ’ দুর্গতের মাঝে রাতের ও সেহ্‌রির খাবার বিতরণ করা হয়। অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আ্বদুল জব্বার সুজনের নেতৃত্বে পুলিশ লাইন স্কুল ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে অবস্থান নেয়া দুর্গতদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতের খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শহরের ভেদভেদী, শহীদ আবদুল আলী একাডেমি স্কুলসহ শিশু একাডেমি ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পৃথক পৃথক সময়ে খাবার সামগ্রী বিতরণ করছে তরুণ যুবকদের সংগঠন প্রিয় রাঙ্গামাটি’র সদস্যরা। এছাড়াও ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও রাতের বেলায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।

No comments

Powered by Blogger.