আলোচনা করলে বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হতো

জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। তাই প্রস্তাবিত বাজেট পেশের আগে জনগণের মতামত নেয়ার প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি আরো বলেছেন, জনগণের মতামত নেয়া হলে বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হতো। গত ১লা জুন জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৭-২০১৮ সালের বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণফোরাম। সংবাদ সম্মেলনে  ড.  কামাল হোসেন বলেন, যে কোনো সরকার জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এই ৫৫ হাজার বর্গমাইলের মালিক জনগণ। যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করছে, তাদের প্রতিটি মুহূর্তে এটি উপলব্ধি করা উচিত। তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জনগণের মতামত নেয়া অপরিহার্য। তিনি বলেন, এই বাজেট প্রস্তাবের আগে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জনগণের মতামত নেয়ার আগেই নীতিনির্ধারণ করে নেয়া হলো। এটি যদি আলোচনার মাধ্যমে করা হতো, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন সহজ হতো। তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয়, বাজেট পেশের পর সরকারের বাইরে থেকে শুধু নয়, সরকারের ভেতর থেকেও সমালোচনা হচ্ছে। সরকার যাতে সমালোচনার শিকার না হয় সেই কাজ করাও সুশাসনের দিক। ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা সংবিধানের মৌলিক ব্যাপারে একমত আছি। এটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এ নিয়ে অনৈক্যের কোনো সুযোগও নেই। আমাদের যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ তা আমরা পূরণ করতে পারবো। কিন্তু সংকীর্ণ স্বার্থে আমরা যেন বিভাজন  সৃষ্টি না করি। প্রস্তাবিত বাজেটে বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, বিচার বিভাগ যেন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া উচিত। বিচার বিভাগকে পর্যাপ্ত অর্থ দেয়া না হলে এটি শুধু বিচার বিভাগেরই ক্ষতি নয়, দেশেরও ক্ষতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। বক্তব্যে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এ বাজেটের প্রাথমিক দুর্বলতা হচ্ছে, বিভিন্ন ভুক্তভোগী জনগণের স্বার্থ বিবেচনার লক্ষে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনা না করে এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢালাওভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের বিরুদ্ধে প্রায় সকল মহল থেকেই আপত্তি উঠেছে। বক্তব্যে বলা হয়, এ বাজেট টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে কতিপয় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে যে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে তা মোকাবিলার জন্য কোনো পদক্ষেপের নির্দেশনা এ বাজেটে নেই। বক্তব্যে টেকসই ও স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘরে শীর্ষ বৈঠকে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করে জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুর্নীতি, সহিংসতা, অবৈধ অর্থ ও অস্ত্রমুক্ত রাজনীতি গড়ে তোলার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল, প্রেসিডিয়াম সদস্য তবারক হোসেন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.