উন্নয়ন ফোরামের বৈঠক - ভিন্নমতের সুযোগ

বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে উন্নয়ন–সহযোগীরা সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে চিহ্নিত করলেও একেবারে নাকচ করে দেয়নি। তাদের অভিমত, এটি অর্জনযোগ্য। বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে ও দারিদ্র্য কমিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে যে ছয়টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা বিবেচনার দাবি রাখে। মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা শক্তিশালীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন সংহত করা কেবল বাংলাদেশ নয়, যেকোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
তবে এই বৈঠকে উন্নয়ন–সহযোগীদের পক্ষ থেকে অর্থসহায়তার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না পাওয়া হতাশাজনক বলেই মনে করি। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে হবে, যা উন্নয়ন–সহযোগীরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছিল। তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরও অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি সত্ত্বেও এ ব্যাপারে এত দিন তিনি মুঠো আলগা করলেন না কেন? অর্থমন্ত্রী যে দক্ষ মানবসম্পদ চান, উপযুক্ত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া সেটি কি সম্ভব?
উন্নয়ন ফোরামের প্রথম দিনের কর্ম অধিবেশনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু নাগরিক সমাজের কথা বলার জায়গা রাখার ওপর জোর দিয়েছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। গণতান্ত্রিক সমাজে কথা বলার জায়গা বলতে জাতীয় ইস্যুতে তর্ক-বিতর্ক বা ভিন্নমত বোঝায়। স্বাধীন গণমাধ্যমও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই সরল সত্যটি সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যত দ্রুত অনুধাবন করবেন, ততই মঙ্গল।
উন্নয়ন ফোরাম ২০১৫ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ দেশ গঠনের কথা বলেছেন, তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হলেও নাগরিক সমাজের কথা বলার জায়গাটা রাখতে হবে। কোনো অজুহাতেই ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ সংকুচিত করা যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.