উপেক্ষিত চরাঞ্চল

সম্পূর্ণ ফেরত গেছে চরাঞ্চল উন্নয়নে বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা। এমনিতেই চরাঞ্চলের উন্নয়নে বরাদ্দ কম। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতায় সেই বরাদ্দটুকুও ব্যয় হয়নি। কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই অর্থ খরচ হবে, তা ঠিক না করেই বরাদ্দ করে বসেছে অর্থ মন্ত্রণালয়! এই হলো সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কাজের ধরন।
বঞ্চিতদের মধ্যে বঞ্চিত হলো চরাঞ্চল। অনেক অঞ্চলের চরবাসী যে শ্রেণির মানুষই হোন, স্বাভাবিকভাবে সহজলভ্য অধিকার ও সুবিধাগুলো তাঁরা পান না। বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক পরিষেবা, নিরাপত্তা ও সামাজিকতার সুযোগ ছাড়া একবিংশ শতাব্দীতে কোনো সমাজ চলতে পারে না। দেশের অনেক চর ও হাওরাঞ্চলে তাই সভ্যতার আলো পৌঁছাতে পারে না। এসব এলাকায় দরকার বিশেষ বরাদ্দ এবং তা জনকল্যাণে ব্যয়ের জন্য প্রশাসনিক অবকাঠামো। কিন্তু সরকার বোধ হয় সেসবের ব্যবস্থায় মন দিতে পারেনি।
এই অর্থ যখন বরাদ্দ হয়, তখনই ভাবা প্রয়োজন ছিল কাদের মাধ্যমে তা ব্যয়িত হবে। তার চেয়েও বড় কথা, দীর্ঘ সময়জুড়ে সমস্যাটা ঝুলে ছিল, বরাদ্দ ফেরত নেওয়ার আগে যথেষ্ট সুযোগও ছিল সমাধানের। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সময় পায়নি। বাস্তবে এর নাম অবহেলা, দায়িত্বহীনতা এবং অদক্ষতা। অথচ সরকার যখন অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দের কিংবা সাফল্যের খতিয়ান দেয়, তখন এই সব অবহেলা ও অদক্ষতা চেপে যাওয়া হয়।
রাজধানীর খুব কাছে সোনারগাঁ-মুন্সিগঞ্জে মেঘনা নদীতে বেশ কিছু চর রয়েছে। এসব এলাকা থেকে নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। বেশ কয়টিতে বিদ্যুৎ নেই, কমিউনিটি চিকিৎসাকেন্দ্র ও থানা-পুলিশ নেই। বালু দস্যুরা এসব চর কেটে নিয়ে যায়, চরবাসীরা নদীতে চলাচলের সময় ডাকাতের কবলে পড়েন, শিক্ষার্থীদের দূরদূরান্তে গিয়ে পড়ালেখা করতে হয়। একদিকে এ রকম লাখো মানুষের জীবনের দুর্ভোগ অন্যদিকে সরকারি অবহেলা পাশাপাশি রাখলে বোঝা যায়, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রান্তিক জনগণ কতটা উপেক্ষিত!

No comments

Powered by Blogger.