ঢাকার জলাবদ্ধতার ক্ষতি

সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়—এটা কোনো নতুন কথা নয়। জলাবদ্ধতার ফলে কী ঘটে, তা নিয়েও প্রচুর আলোচনা-অভিযোগ উচ্চারিত হয়; অভিযোগ প্রধানত এই যে জলাবদ্ধতার ফলে মানুষের ভোগান্তি হয়। শুধু যে রাস্তাঘাটে চলাচলে ভোগান্তি হয় তা নয়, অনেক এলাকার বাসাবাড়িতেও পানি ওঠে বলে বসবাসও হয়ে ওঠে দুর্ভোগময়। কিন্তু রাজধানীর জলাবদ্ধতার ফলে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিও যে হয়, তা স্মরণ করিয়ে দিল বিশ্বব্যাংকের এক সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন। বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
‘জলবায়ু ও দুর্যোগসহিষ্ণু বৃহত্তর ঢাকা এলাকা: একটি ব্যাষ্টিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নিলে ২০১৪ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে আমরা ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শিকার হব। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যুক্ত হলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বলা বাহুল্য, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা।
ক্ষতি ১১ হাজার কোটি টাকা!
ঢাকার জলাবদ্ধতার ফলে এখন প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক নানা কারণে ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকবে। সেই বাড়তি ক্ষতি কীভাবে এড়ানো যায়, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে সেই দিকনির্দেশনাও আছে। বলা হয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সরকার যদি এখনই পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত করা, খাল ও জলাশয়গুলো দখলমুক্ত করে পানি চলাচলের ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো সম্ভব। এসব কাজে ব্যয় হবে ২৭০ কোটি টাকা।
সুতরাং কী করতে হবে, তা স্পষ্ট। প্রয়োজন আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজগুলো শুরু করা এবং দক্ষতার সঙ্গে সেগুলো যথাসময়ে শেষ করা। এই ক্ষেত্রে ঢাকা জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অর্ধশতাধিক সরকারি সংস্থার কাজের সমন্বয় রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.