সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি -দায়মুক্তির পথে বড় পদক্ষেপ

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সঙ্গে তাঁদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালনের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই তাঁদের বিচারকে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির প্রতি দণ্ড কার্যকর হওয়ার স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখাই সমীচীন। চুয়াল্লিশ বছর পর হলেও এই বিচার ও রায় কার্যকর হওয়া সমগ্র জাতির জন্য স্বস্তিদায়ক। এই বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতা নিয়ে অপরাধীদের দম্ভ যেমন চূর্ণ হয়েছে, তেমনি ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে।
মুজাহিদের বিচারের ঘটনাটি অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার কারণে এই প্রথম একজন অপরাধী চূড়ান্ত শাস্তি পেলেন। এটা অনুশোচনীয় যে, মন্ত্রী হিসেবে তাঁর গাড়িতে একদা পতাকা উড়েছিল। তাঁর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনীই যে বুদ্ধিজীবী হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছিল, তার অকাট্য তথ্য–প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘৃণ্য অপকর্মের সাক্ষ্য হয়ে আছেন কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের স্বত্বাধিকারী শহীদ নূতনচন্দ্র সিংহের স্বজনসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহু মানুষ। এই বিচারের মাধ্যমে জাতি কলঙ্কমুক্ত হলো।
সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর তবে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে যুদ্ধাপরাধের বিচার সামনে রেখে দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। কোনো কোনো বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশে বিরোধী নেতাদের বিচার হচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের জানা উচিত যে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান নয়, বিচারটি হচ্ছে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। ১৯৭৩ সালে প্রণীত যে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের অধীনে বিচার হচ্ছে, তাতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিলসহ বিবাদীপক্ষের সব ধরনের আইনি সুরক্ষার বিধান রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার যুদ্ধাপরাধ-বিষয়ক সাবেক রাষ্ট্রদূত স্টিফেন র্যা প এখন যা–ই বলুন, এর আগে তিনি যুদ্ধাপরাধ বিচার–প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
বর্তমান রাজনীতির সমীকরণ নয়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি একাত্তরে সংঘটিত অপরাধের নিরিখে দেখলে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্কের অবসান হবে আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.