উদ্বৃত্তের পরও লবণ আমদানির অনুমতি by মিজান চৌধুরী

দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ১৭ লাখ টন। এরপরও এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে, প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও এক লাখ টনের। উদ্বৃত্ত থাকার পরও সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে। চাষীদের অভিযোগ, একটি চক্র ফায়দা লুটতে লবণ আমদানির নেপথ্যে কাজ করছে। পর্যাপ্ত থাকার পরও লবণ আমদানিতে হুমকির মুখে পড়বে স্থানীয় শিল্প- এ আশংকা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম (আইবিএফবি)। চিঠিতে লবণ আমদানি বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে। লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় দু’লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন যুগান্তরকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তা দেয়া হয়েছে। আরও এক লাখ টন আমদানির অনুমোদন চেয়ে আরেকটি চিঠি এসেছে। এ বিষয়ে আমরা পর্যালোচনা করছি। তিনি আরও বলেন, লবণের ঘাটতি আছে কিনা তা শিল্প মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে। এরপর নীতিমালা অনুযায়ী আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ এটি স্পর্শকাতর বিষয়। এরপরও প্রাথমিকভাবে এক লাখ টন আমদানির অনুমতি দিয়েছি। আইবিএফবি জানায়, এ বছর মোট লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ মেট্রিক টন। গত বছরের মজুদ ছিল তিন লাখ মেট্রিক টন। ফলে লবণের মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ টন। কিন্তু দেশে মোট চাহিদা হচ্ছে ১৬ লাখ টন। ওই হিসাবে চাহিদার চেয়ে এক লাখ টন লবণ বেশি রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এরপরও লবণ আমদানি করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে লেখা আইবিএফবির চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ ও সার্বিক সহায়তায় দেশ ধান-চাল উৎপাদনের পাশাপাশি লবণ উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এ অবস্থায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না- যা আমাদের লবণের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভর করে তুলে। এতে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে লবণ চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জীবিকার তাগিদে তারা অন্য পেশায় চলে যাবে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এক সময় কক্সবাজারে ৭১ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হতো। কিন্তু নানামুখী ষড়যন্ত্রের কারণে কৃষকরা লবণ চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন। ফলে চলতি মৌসুমে মাত্র ৫১ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রে শিল্পের প্রয়োজন অজুহাতে লবণ আমদানি করা হয়। কিন্তু দেশে এখন শিল্প লবণ প্রস্তুতে সক্ষম শোধনাগার রয়েছে। এরপরও যদি কোনো বিশেষ ধরনের লবণ কোনো বিশেষ শিল্পের জন্য প্রয়োজন হয়, তবে তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে এবং চাহিদা নির্ধারণ করে কেবল প্রয়োজনীয় পরিমাণ আমদানির অনুমতি দেয়া সঙ্গত। তা না হলে শিল্পের নামে অপ্রয়োজনীয় লবণ আমদানি এ শিল্পের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেখার জন্য জানান।
জানতে চাইলে আইবিএফবি’র নির্বাহী পরিচালক আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে। আইবিএফবি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, এই মুহূর্তে লবণ আমদানি ঠিক হবে না। আইবিএফবি ব্যবসা বাণিজ্য গবেষণা সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়িক সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরে সরকারের কাছে সুপারিশ করে থাকে। লবণের ক্ষেত্রে আইবিএফবি মনে করছে, আমদানি হলে দেশী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.