কাশের দেশে by মো. সাইফুল্লাহ

সেকি! শরৎ এসে গেল, আর কাশফুলের সঙ্গে দেখা করবেন না? এই ‘অপরাধ’ তো বিয়েবাড়ি বেড়াতে গিয়ে কনে না দেখার মতো! শহরের দশা যখন ‘বাক্সে বাক্সে বন্দী বাক্স’, কাশের বন তো আর পথ চলতে দেখা হয়ে যায় না। রীতিমতো ঘটা করে দেখে আসতে হয়। এ সময়ে তরুণেরা তাই দলে দলে ছুটছেন রাজধানীর দিয়াবাড়ি, আফতাবনগর কিংবা বেড়িবাঁধের মতো জায়গাগুলোতে। ইট-কাঠ-পাথরের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো যেখানে কিছু কাশবন বেঁচে আছে।
‘পুচ্ছ তোলা পাখির মতো
কাশবনের এক কন্যে,
তুলছে কাশের ময়ূরচূড়া
কালো খোঁপার জন্যে।’
নির্মলেন্দু গুণের ‘কাশফুলের কাব্য’ হয়তো তরুণীদের প্ররোচনা দিচ্ছে। ‘কাশবনের এক কন্যে’ তারা যাচ্ছেন শুভ্র কাশের সঙ্গী হতে। সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি ছবির সেই বিখ্যাত ট্রেন দৃশ্যও তরুণদের আগ্রহী করতে পারে। অপু-দুর্গার মতো এক ছুট লাগাতে ইচ্ছা হতে পারে কাশবনের ফাঁক দিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আফসানা শাম্মী অবশ্য অত সাহিত্যের স্মরণ করলেন না। তাঁর সোজাসাপটা জবাব, ‘গিয়েছিলাম ছবি তুলতে।’ তা বটে। ফেসবুকের প্রোফাইল আর কভার ছবিতে এখন কাশফুলের মৌসুমই চলছে। আফসানা বলছিলেন, ‘ঈদের নাটক দেখতে বসে দেখি সব চ্যানেলে একই স্পট। নাটকের পাত্র-পাত্রী বদলে যায়, জায়গা একই থাকে। ফাঁকা রাস্তা, কাশের বন...বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় জায়গাটা? বলল দিয়াবাড়ি। ঈদের দুদিন পরই সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।’ তা যে উদ্দেশ্যে এই ভ্রমণ, সেটা কি সার্থক হলো? মনের মতো প্রোফাইল ছবি কি পাওয়া গেছে? মেসেঞ্জারে আফসানার ‘স্মাইলি’ সেই প্রশ্নের উত্তর দিল।
কাশের বন চোখে পড়ে রাজধানীর আফতাবনগরেও। এখানে গরুর হাট বসেছিল। ঈদের পর কাশের বন আবার তার পুরোনো রূপ ফিরে পেয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে গাড়ি-বাইক হাঁকিয়ে, কেউবা রিকশায় চড়ে হাজির হচ্ছেন সেখানে। আফতাবনগর ছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পেছন দিকেও চোখে পড়বে কাশবন। কাকতালীয়ভাবে খুঁজে খুঁজে যেন কাশবনের কাছাকাছিই ক্যাম্পাস করেছে কয়েকটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আফতাবনগরে আছে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আছে নর্থ সাউথ ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার কাশের দেশে তাই ছাত্রছাত্রীদের ভিড়টাই বেশি। ক্লাস শেষে দলবেঁধে অনেকেই আড্ডা দেন কাশবনের পাশে ফাঁকা রাস্তায়। তবে রাজধানীর যেসব স্থানে কাশবন দেখা যাচ্ছে এ সময়, সেসব জায়গায় সন্ধ্যার পর যাওয়াটা মোটেই নিরাপদ নয়। সব সময় দলবেঁধে যাওয়া উচিত।
কদিন আগে দিয়াবাড়ি বেড়িয়ে এসেছেন নবদম্পতি রিয়াজুল আরেফিন ও শায়লা। কথা হলো রিয়াজুলের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘ঢাকা শহরে তো বেড়ানোর খুব বেশি জায়গা নেই। এখন বিকেলবেলা আবহাওয়াটা ভালো থাকে। ঈদের পর পর রাস্তাঘাটও ফাঁকা ছিল। তাই ঘুরে এলাম। সন্ধ্যার আগে আগে কাশফুলের বন দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে।’ অদ্ভুত সুন্দরের খোঁজেই কাশফুলের রাজ্যে যাচ্ছেন অনেকে। এ সুযোগে কেউ আরও একবার দুটো লাইন ধার করতে পারেন ‘কাশফুলের কাব্য’ থেকে,
‘তোমার হাতে বন্দী আমার
ভালোবাসার কাশ
তাই তো আমি এই শরতে
তোমার ক্রীতদাস।’

No comments

Powered by Blogger.