পোশাক শিল্পে একের পর এক ধাক্কা by এমএম মাসুদ

মেঘ কাটছে না রপ্তানিতে আশিভাগ অবদান রাখা দেশের পোশাক শিল্পের। একের পর এক ধাক্কায় অনিশ্চয়তা দানা বাঁধছে এ খাত ঘিরে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন দেশের সতর্কতা জারির পর ক্রেতা আসা কমে গেছে পোশাক শিল্পের। গত কয়েক বছরে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস, ওয়েজবোর্ড নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ, জিএসপি সুবিধা স্থগিত, অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স দ্বারা ত্রুটিপূর্ণ কারখানা বন্ধ, নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিতিরতা ও সর্বশেষ হরতাল-অবরোধ কারণে পোশাক খাত বড় ধরনের ধকলের শিকার হয়। সাম্প্রতিককালে যোগ হয়েছে বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ড। এতে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বজুড়ে। বেশ কয়েকটি দেশ সতর্কতাও জারি করে। এতে ইমেজ সংকটের প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় তৈরী পোশাক শিল্পে ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, ইমেজ সংকট ও নতুন বাজার তৈরিতেও বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়বে বাংলাদেশ। তারা জানান, রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে তৈরী পোশাক শিল্প। দেশে কোন সমস্যা দেখা দিলে প্রথমেই এ শিল্পের ওপর আঘাত পড়ে। ইমেজ সংকট দেখা দেয়। তাদের মতে, পোশাক শিল্পে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধরনের আঘাতে বিশ্বজুড়ে যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে হলে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পরপর দুজন বিদেশী নাগরিক হত্যা অনেক উদ্বেগের বিষয়। এ হত্যাকাণ্ডের ফলে পোশাক শিল্পের বিদেশী ক্রেতারা তাদের নির্ধারিত সফর, বৈঠক বাতিল ও স্থগিত করা শুরু করেছে। তিনি বলেন, যেসব দেশে আমাদের নতুন মার্কেট তৈরি হয়েছে, সেসব মার্কেটের জন্য সমস্যাটা বেশি। কেননা, দেশের এমন পরিস্থিতিতে তারা পিছু হটবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ল্যাটিন আমেরিকাসহ বেশকিছু অঞ্চলে আমাদের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সমস্যাটা বেশি হতে পারে। গত সপ্তাহে বিজিএমইএর সঙ্গে বায়ার্স ফোরামের মাসিক বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে তা স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরাম ২ বিদেশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমানে অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে বৈঠক করা নিরাপদ নয়।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, বিদেশী নাগরিক হত্যায় ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরমধ্যে বায়ার্স ফোরামের বৈঠক স্থগিত একটা অশনি সঙ্কেত। এ অবস্থা চলতে থাকলে আবারও পোশাক শিল্প সংকটের দিকে যাবে; যা পোশাক শিল্পের নতুন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বায়ারদের অর্ডার দেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ সময়ই তারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এটা আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য ভাল লক্ষণ নয়। আর এমন পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধিও কমবে।
জানা গেছে, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতের ইমেজ সংকটে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিল করে। এ ছাড়া গত বছরের শেষের দিকে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতির সম্মুখীন হয় বাংলাদেশের বড় এ রপ্তানি খাত। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আবার বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডকে পোশাক খাতের জন্য অশনি সঙ্কেত মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
এদিকে বিদেশী হত্যার ঘটনায় দেশে বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এবং রপ্তানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ডিসিসিআই। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, এ ধরনের ঘটনায় তৈরী পোশাকসহ অন্য খাতের অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদেশী হত্যার এ ঘটনা যাতে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ এবং রপ্তানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত  করতে না পারে, সেজন্য বিদেশী ক্রেতা ও নাগরিকদের দেশে অবস্থান, চলাচলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংগঠনটি।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পোশাক শিল্প বিশাল চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। একটার পর একটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, পরপর দুটি ঘটনা আমরা ছোট করে দেখলেও এর বিশালতা আছে। বিদেশীরা গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও রাজনৈতি অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্যবসায়ীদের আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

No comments

Powered by Blogger.