ইসরাইল ফ্রান্স জাপানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা বেশি : ওবামা

ইসরাইল, ফ্রান্স ও জাপানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা বেশি বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটনে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় ঢুকে গুলি করে নয়জনকে হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এক টুইটার বার্তায় আমেরিকায় বন্দুক হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। রোববার টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী হামলা বেড়ে যাওয়ায় সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বারাক ওবামা।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের টুইটার অ্যাকাউন্ট (পটাস) এ প্রকাশিত ওবামার পোস্টে বলা হয়, মাথাপিছু জনসংখ্যার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ২৯৭ জনকে হত্যা করা হয়। যা জাপান, ফ্রান্স ও ইসরাইলের চেয়ে বেশি। জাপানে এ সংখ্যা ৪৯ ও ফ্রান্সে ৩৩। ওবামা তার টুইটার পোস্টে বলেন, শুধু সমবেদনা জানানোই যথেষ্ট নয়, সময় এসেছে ব্যবস্থা নেয়ার। এদিকে গার্ডিয়ান প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বন্দুকধারী মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের। তাদের শতকরা ৮৮ জনের কাছে বন্দুক রয়েছে। ওবামার পাশাপাশি অস্ত্র আইন নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সানফ্রানসিসকোর মেয়র সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। এদিকে আবারও বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটে একটি পার্টিতে। অস্ত্রধারীর গুলিতে ১ জন নিহত এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। শনিবার স্থানীয় সময় বিকালে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, একটি বাস্কেট বল কোর্টে পার্টিটি চলছিল। ঘটনাস্থলে একাধিক শিশুও উপস্থিত ছিল। ডেট্রয়েট পুলিশের সহকারী কমিশনার স্টিভ ডোলন্ট জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। তবে বাকিরা আশংকামুক্ত। তারা ওই হামলাকারীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এরইমধ্যে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিয়েন্সে গ্রেফতার একজনকে কারাগারে নেয়ার পথে গুলিতে শহরটির এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। শনিবার পুলিশের গাড়িতেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নিউ অর্লিয়েন্সের পুলিশ কর্মকর্তারা। হত্যাকাণ্ডের জন্য পুলিশের গাড়িটি থেকে পালিয়ে যাওয়া গ্রেফতারকৃত ট্রাভিস বয়েসকে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে ফের গ্রেফতারে ব্যাপক অভিযান শুরু করা হয়েছে। পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো বয়েসকে গাড়িতে উঠিয়ে নিউ অর্লিয়েন্সের প্যারিশ কারাগারে দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারিয়েল হলওয়ে (৪৫)। ২২ বছর ধরে পুলিশে চাকরি করা অভিজ্ঞ এ কর্মকর্তার গাড়িটি একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভেতরে তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়। ৩৩ বছর বয়সী বয়েসকে আর গাড়িতে পাওয়া যায়নি,
জানিয়েছে পুলিশ। কীভাবে হলওয়ে নিহত হলেন তা পরিষ্কার না হলেও পুলিশ বয়েসকেই সন্দেহ করছে। কিন্তু হলওয়ে যখন গাড়িটি চালানো শুরু করেন বয়েসের হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া লাগানো ছিল। এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাইকেল হ্যারিসন বলেছেন, পিছমোড়া করে হাতকড়া পড়ানো থাকলেও বয়েস কোনোভাবে কাঁধ ঘুরিয়ে তার শরীরের সামনের দিকে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রের নাগাল পেয়েছিলেন এবং তা দিয়ে গুলি করেছিলেন। কিন্তু বয়েস অস্ত্র কোথা থেকে পেয়েছিলেন তা অপরিষ্কারই রয়ে গেছে, কারণ হলওয়ের সার্ভিস পিস্তল তার হোলস্টারেই ছিল এবং তা থেকে গুলি করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হ্যারিসন। তবে হলওয়ে বয়েসকে গ্রেফতাকারী পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন হ্যারিসন। নিহত হলওয়েকে নিজের ব্যক্তিগত বন্ধু পরিচয় দিয়ে তাকে ‘খুব অভিজ্ঞ এক কর্মকর্তা’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। অন্যদিকে বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লস্টনের চার্চটি উপসনার জন্য রোববার পুনরায় খুলে দেয়া হয়েছে। গত বুধবার (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার) আফ্রো-আমেরিকান চার্চটিতে গোলাগুলিতে ৯ কৃষ্ণাঙ্গ নিহতের পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ‘মাদার ইমানুয়েল’ নামে পরিচিত ইমানুয়েল আফ্রিকান মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চটিতে শনিবার নিহতদের স্মরণে এর সদস্যরা একত্রিত হন। সেখানে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। ওদিকে রুফের এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবারও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে কৃষ্ণাঙ্গরা। যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের নির্যাতনের যে বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তারই একটি অংশ বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।

No comments

Powered by Blogger.