বরিশাল-চরমোনাই সড়কে আতঙ্কে কাটা পড়ল এক হাজার গাছ

বরিশালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গাছ চিহ্নিত (মার্কিং) করায় ছোট-বড় প্রায় এক হাজার গাছ কাটা পড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গাছ নিয়ে যাবে এমন গুজবে সড়কের দুই পাশ থেকে গণহারে গাছ কাটা হচ্ছে। চার শতাধিক গাছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চিহ্ন দিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে।
বন বিভাগ বরিশাল কার্যালয় থেকে জানা যায়, সড়ক বিভাগ নয়, সামাজিক বনায়ন বা ব্যক্তিমালিকানার গাছ কাটতে হলে বনজ দ্রব্য পরিবহন (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ অনুযায়ী বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলতলা খেয়াঘাট থেকে সড়কের দুই পাশে চার শতাধিক গাছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) চিহ্ন দেওয়া রয়েছে। কিছু গাছের বাকল তোলা হয়েছে চিহ্নিত করার জন্য। অনেকগুলো গাছ কুপিয়ে রাখা হয়েছে। চিহ্নিত করা এলাকাসহ বরিশাল—চরমোনাই সড়কের প্রায় আট কিলোমিটার এলাকায় গাছ কাটার উৎসব চলছে। মেহগনি, রেইনট্রি, চাম্বল, আকাশমণিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন।
সড়কের পশুরিকাঠি এলাকার বাসিন্দা আবদুস ছাত্তার অভিযোগ করেন, গত পাঁচ-ছয় দিন আগে সওজ বরিশাল-চরমোনাই সড়কের বেলতলা ফেরিঘাট থেকে গাছে চিহ্ন দেওয়া শুরু করে। তাঁরা সড়কের দুই পাশে ব্যক্তিমালিকানায় থাকা সব গাছে চিহ্ন দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরপরই যে যার বাড়ির সামনের গাছ কাটা শুরু করে।
রাজারচর এলাকার বাবুল বেপারি বলেন, ‘মোর গাছে অন্যরা ছিল দেবে। হেই ভয়ে তিন দিন আগ থেকে গাছ কাটা শুরু করছি।’
চরমোনাই এলাকার বুখাই নগরের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, গাছ সরকার নিয়ে যাবে এমন গুজব শুনে নির্বিচারে গাছ কাটার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা নামমাত্র মূল্যে গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
পশুরিকাঠি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার জানান, তিনি তিনটি রেইনট্রি গাছ কেটেছেন। তাঁর দাবি তাঁর লাগানো গাছই তিনি কেটেছেন। মোজাম্মেল ফরাজি বলেন, ‘আমি তিনটি এবং আমার চাচা পাঁচটি গাছ কেটেছেন।’
কাঠ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, মানুষ গাছ বিক্রি করছেন, তাঁরা কিনেছেন। তিনি ১৪টি গাছ কিনেছেন। গাছের ক্রেতা জামাল হাওলাদার ১৫টি গাছ কিনেছেন বলে জানান।
সড়কে গাছ চিহ্নিতকরণের কাজ তাঁরা শুরু করেননি দাবি করে সওজ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ সাহেদ বলেন, ‘সড়ক বিভাগ তাঁর গাছ চিহ্নিত করতে পারবে। সে জন্য বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। গাছ কাটার আগে অনুমতি নিতে হবে। বরিশাল-চরমোনাই সড়কে গাছ কাটা হচ্ছে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বন বিভাগ বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, সরকারি-বেসরকারি গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করতে বন বিভাগের অনুমতি লাগবে। বরিশাল-চরমোনাই সড়কে চিহ্নিতকরণের গুজব তাঁরা শুনেছেন। এ ব্যাপারে সওজ বন বিভাগকে কিছু জানায়নি বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.