মূল আসামির পক্ষে আ.লীগের সাফাই

ইমরান সজিব আকন
খুলনার লবণচরায় যুবলীগ কর্মী ইমরান সজিব আকনকে কুপিয়ে হত্যার তিন দিন পার হলেও মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মূল আসামি হাফিজুর রহমানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা। এ ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্ত সজিবের পরিবার বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
গতকাল রোববার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সজিবের পরিবার ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় এবং সুষ্ঠু বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
লিখিত বক্তব্যে সজিবের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তিনি সাচিবুনিয়ায় একটি জমি কিনে প্লট আকারে বিক্রির উদ্যোগ নেন। গত বৃহস্পতিবার ওই জমিতে রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে আসামি হাফিজুরের লোকজন বাধা দেয় এবং জমির কাগজপত্র নিয়ে হাফিজুরের অফিসে যেতে বলে। শুক্রবার সকালে হাফিজুরের অফিসে গেলে তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়। এরই মধ্যে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানানো হয়, রূপসা এলাকার মান্দা খালপাড়ে তাঁর ছেলে সজিবকে কোপানো হচ্ছে।
সজিবের ভাই মিজান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখেন, দুর্বৃত্তরা একটি কাটা হাত নিয়ে উল্লাস করছে। তাঁকেও অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করা হয়। কিন্তু পুলিশ চলে আসায় বেশিদূর যেতে পারেনি সন্ত্রাসীরা। যে ঘরে সজিবকে কোপানো হয়েছে, সেই ঘরে ঢুকে দেখতে পান সজিব উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। তাঁর কোমরের নিচ ও পিঠের এক ইঞ্চি জায়গাও অক্ষত নেই। মারা যাওয়ার আগে মাহাবুব, চঞ্চল, ভাগ্নে সুমন ও সিরাজের নাম বলে গেছেন সজিব। এঁরা হাফিজুরের লোক বলে তিনি জানান। পরে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলামের সহায়তায় বাঁ হাত কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সজিবকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সজিবের দুই পায়ে প্রায় ১১৪টি কোপের চিহ্ন ছিল। কাটা হাত সন্ত্রাসীরা খালের মধ্যে ফেলে যায়। পরে পুলিশ জাল ফেলে খাল থেকে ওই হাত উদ্ধার করে।
ওই দিনই নজরুল ইসলাম আকন বাদী হয়ে লবণচরা থানায় মামলা করেন। মামলায় খুলনা মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হয়। তা ছাড়া আরও নয়জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লবণচরা থানার এসআই কাজী বাবুল হোসেন জানান, ঘটনার রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার ১০ নম্বর আসামি আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আজ সোমবার এ বিষয়ে শুনানি হবে। তা ছাড়া প্রধান আসামি হাফিজসহ অন্যদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযান চলছে।
আসামির পক্ষে সাফাই: মামলার এজাহারভুক্ত এক নম্বর আসামি হাফিজুর রহমানের পক্ষে ২০ জুন রাতে বিবৃতি দিয়েছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর কমিটির সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মাহবুবুল আলম (সোহাগ) স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যুবলীগ নেতা হাফিজুরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি মহল ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডের সময় হাফিজুর খুলনায় ছিলেন না। অথচ তাঁকে এ হত্যাকাণ্ডে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়িয়ে মামলা করা হয়েছে। নেতারা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে মামলার প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
বিবৃতিদাতা হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ পার্শ্ববতী পাঁচটি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম রয়েছে।
বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার খালেক বলেন, যখন সজিবকে হত্যা করা হয়, তখন হাফিজুর খুলনায় ছিলেন না। তাঁকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.