১৬ কোটি বাঙালিকে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে মিয়ানমার -বিজিবির সক্ষমতা নিয়ে হাজি সেলিমের প্রশ্ন

নায়েক আবদুর রাজ্জাক
জাতীয় সংসদে গতকাল সোমবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বতন্ত্র সাংসদ হাজি মো. সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘ছবিতে দেখেছি, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী রাজ্জাককে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে। এর অর্থ ১৬ কোটি বাঙালিকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে, সারা বাংলাদেশকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে।’
গতকাল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় হাজি সেলিম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাজেটে বিজিবির জন্য কোটি কোটি টাকা রাখা হয়। তারা কী করে? তাদের কি শক্তি নেই? শক্তি থাকলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। তাদের এ ভূমিকায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন²হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। বিজিপির সঙ্গে নেই। সারা বিশ্বে একটা কলঙ্কের নাম মিয়ানমারের বিজিপি। তারা চোরাচালান, মাদক আর ইয়াবার ব্যবসায় জড়িত। তারা গুলি চালাল আর একজনকে তুলে নিয়ে গেল। বিজিবি কিছুই করল না।
হাজি সেলিম বলেন, কোনো কূটনৈতিক আলোচনা না করে, পতাকা বৈঠক না করে রাজ্জাককে (বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাক) আটকে রাখা হয়েছে। এরপর বিজিপির ফেসবুকে তিনটি ছবি আপলোড করা হয়েছে। তার একটিতে দেখা গেছে, রাজ্জাকের নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। আরেকটিতে হাতকড়া পরিয়ে তাঁকে আসামির মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
গতকাল সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, এম এ হান্নান প্রমুখ। এরপর সংসদের অধিবেশন আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
মিয়ানমার আইনের লঙ্ঘন করেছে: মানবাধিকার কমিশন
মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ধরে নিয়ে এবং তাঁকে ফেরত না দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, মিয়ানমারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, যাতে করে রাজ্জাককে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তারা মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ করে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. হুমায়ুন কবীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ মঙ্গলবার এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জেনেছে, গত ১৭ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীতে টহলরত অবস্থায় মিয়ানমারের বিজিপি ও বিজিবির মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন বিজিবি জওয়ান গুলিবিদ্ধ হন। বিজিপি সদস্যরা বিজিবি নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যায় এবং অদ্যাবধি তাকে ফেরত দেয়নি। এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ‌ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন জানায়, ঘটনার ৬ দিন পরও নায়েক রাজ্জাককে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি। হস্তান্তরের বিষয়ে দেশটি গড়িমসি করছে। কমিশন মনে করে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানায় অনুপ্রবেশ করে সেই দেশের নাগরিককে অপহরণ বা আটক করা যায় না। এ ছাড়া মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নায়েক রাজ্জাককে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থাপন করেছে, তাতে তার মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশন মনে করে।
অতি দ্রুত নায়েক আবদুর রাজ্জাককে সুস্থ অবস্থায় বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য কমিশন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.