পতাকা-পিস্তল হাতে ঘাতকের ইশতেহার

দাসপ্রথা সমর্থিত সাবেক মার্কিন সেনাবাহিনীর পতাকা ও পিস্তল হাতে বর্ণবিদ্বেষী ইশতেহার ঘোষণা করেছিল ডিলান রুফ। ‘নতুন যুক্তরাষ্ট্র’ গড়ার ওই ইশতেহার বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের চার্লসটনে কৃষ্ণাঙ্গদের গির্জায় ঢুকে গুলি করে নয়জনকে করেছে রুফ। শনিবার একটি ওয়েবসাইটে চালর্সটন হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন খুনি ডিলান রুফের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বর্ণবাদী ইশতেহার পাওয়া গেছে। ইশতেহারের পাশাপাশি পিস্তল ও যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধকালে কনফেডারেট সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত পতাকা হাতে রুফের ছবিও পাওয়া গেছে। রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই ওয়েবসাইটটি কার তৈরি বা ছবিগুলো কে পোস্ট করেছে এবং সেগুলোর সত্যাসত্য তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। তদন্তকারীরা ওয়েবসাইটটি আমলে নিয়ে এর নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সংস্থা এফবিআই। ওয়েবসাইটের ছবিগুলোর একটির মধ্যে দশমিক ফোর ফাইভ ক্যালিভারের পিস্তল হাতে রুফকে দেখা গেছে, গির্জার হত্যাকাণ্ডেও একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওয়েবসাইটে দেয়া ওই বর্ণবাদী ইশতেহারে যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে ডিলানের ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। তার মতে, আফ্রিকান-আমেরিকানদের সঙ্গে করা আচরণ নিয়ে কোনো অনুশোচনার কারণ নেই। নির্দিষ্ট না করা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে লেখক ‘উদাহরণ’ স্থাপন করবেন বলে লেখায় প্রকাশ পেয়েছে।
ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমার অন্য কোনো পছন্দ নেই। আমি চার্লসটনকে বেছে নিয়েছি কারণ আমার রাজ্যে এটিই সবচেয়ে ঐতিহাসিক শহর এবং এক সময় দেশের মধ্যে এখানেই শ্বেতাঙ্গদের অনুপাতে কৃষ্ণকায়দের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল।’ রুফের হাতের ওই কনফেডারেট পতাকার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সংশ্লিষ্টতাও প্রকাশ পেয়েছে। গৃহযুদ্ধকালে (১৮৬১-১৮৬৫) দাসপ্রথা বিলোপের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। দেশটির দক্ষিণের ১১টি রাজ্য কেন্দ্রের দাসপ্রথা বিলোপের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে দাসপ্রথার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। বিদ্রোহী এই রাজ্যগুলো নিজেদের কনফেডারেট স্টেট অব আমেরিকা বলে ঘোষণা করেছিল। এই কনফেডারেট রাজ্যগুলোর সেনাবাহিনীর পতাকাই কনফেডারেট পতাকা হিসেবে পরিচিত। দাস প্রথার পক্ষে থাকায় এই পতাকার সঙ্গে বর্ণবাদের সম্পর্ক আছে বলে ধরে নেয়া হয়। বন্দর শহর চার্লসটন থেকেই সেই গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। এখানে কনফেডারেট বাহিনীর হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি দুর্গ দখল করে নিয়েছিল। রুফের ছবিগুলোর মধ্যে কনফেডারেট সামরিক বাহিনীর জাদুঘর ও তুলার ক্ষেত্রে কাজ করা দাস শ্রমিকদের সংরক্ষিত বাড়ির সামনে তোলা ছবিও পাওয়া গেছে। রুফের ছবিগুলোর মধ্যে স্থানীয় এমন কিছু বিশেষ জায়গা বেছে নেয়া হয়েছে যেগুলোতে চালর্সটন শহরের বর্ণবাদী অতীতকে তুলে ধরা হয়েছে। এসব ছবির মাধ্যমে শহরটির কৃষ্ণাঙ্গ সমাজকে আফ্রিকান-আমেরিকান অতীত মনে করিয়ে দিয়ে স্পর্শকাতর একটি ইস্যুকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.