নিম্নমানের গম খাদ্য বিভাগের, আটায় দুর্গন্ধ by রোজিনা ইসলাম ও ইফতেখার মাহমুদ

খাদ্য বিভাগের সরবরাহ করা গম থেকে তৈরি আটা অত্যন্ত নিম্নমানের। এ অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে একাধিকবার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সর্বশেষ ১০ জুন তাদের সদর দপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে এই আটা চার-পাঁচ দিনের বেশি মজুত থাকলে পোকা হয়। এর আগে পুলিশের রাজশাহীর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে বলা হয়, এই আটা বিতরণ করার পর বাহিনীর সদস্যদের মনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা থেকে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ৩৩ হাজার পুলিশ সদস্যের জন্য রেশন হিসেবে যে চাল ও গম সরবরাহ করা হয়, তা নিয়ে এমন মন্তব্যসহ একাধিক চিঠি সংস্থাটির সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাতে এই গমকে অত্যন্ত নিম্নমানের ও দুর্গন্ধযুক্ত বলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর খাদ্য মন্ত্রণালয়কে উন্নত গম সরবরাহ করতে বলেছে।
তবে খাদ্য বিভাগ তাদের গম নিম্নমানের নয় দাবি করে বলেছে, সরবরাহের আগে এই গম তাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে যে প্রতিবেদন পেয়েছে, তাতে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা হয়নি। অর্থাৎ তাদের সরবরাহ করা গমে কোনো সমস্যা নেই।
ডিএমপির ১০ জুনের চিঠিতে আরও বলা হয়, পুলিশের পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য, জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশেষ নিরাপত্তা ফোর্সের বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীসহ প্রায় ৩৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী পুলিশের রেশন স্টোর থেকে গম নিয়ে থাকেন। তাঁরাও এ বিষয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা গুদাম থেকে গম এনে তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করতে দিয়েছি। পরীক্ষার ফলাফল হাতে এলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়গুলো জানাব।’
পুলিশ সদর দপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইডি) রেজাউল করিম চাল ও গমের নিম্নমান নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা অভিযোগের ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, এসব অভিযোগের বিষয় খাদ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য এ বছর চাল ও গম কেনা বাবদ খাদ্য বিভাগকে মোট ১৭৭ কোটি ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পুলিশের রেশন হিসেবে দেওয়ার জন্য এ বছর ৪৭ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন গম খাদ্য বিভাগের কাছ থেকে কেনা হয়েছে। খাদ্য বিভাগ এসব গম প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে কিনে ৩০ টাকা ৪০ পয়সা করে পুলিশ বাহিনীকে সরবরাহ করেছে।
আর খাদ্য বিভাগের দৈনিক খাদ্যশস্যবিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে উন্নতমানের গম আমদানি করলে প্রতি কেজি গমের দাম দাঁড়ায় ১৯ টাকা। আর বাজারে প্রতি কেজি গম বর্তমানে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুলিশের সারা দেশের সব কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে প্রায় একই অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, খাদ্য বিভাগের সরবরাহ করা চাল রান্না করার পর ভাত মোটা, স্বাদহীন ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। এ ছাড়া নোংরা ও কাঁকরযুক্ত চাল পাওয়া গেছে। সরবরাহ করা গমের আটার মানও অত্যন্ত নিম্নমানের।
তবে খাদ্য বিভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ অভিযোগ মানতে নারাজ। খাদ্য অধিদপ্তরের মতে, গম ও আটার গুণগত মান পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে আটা বা গমের মানের বিষয়ে কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিম্নমানের গম আমদানি কীভাবে হলো, জানতে চাইলে গম আমদানি দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্য বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক মো. সারওয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রাজিল থেকে গম আমদানির ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। সবার মতামত নিয়ে আইন মেনে গম আমদানি হয়েছে। এই গম অখাদ্য নয়। প্রসঙ্গত, ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানির পর সম্প্রতি সারওয়ার খানকে ওসডি করা হয়েছে।
এদিকে ১৮ জুন নিযুক্ত মহাপরিচালক ফয়েজ আহমেদ এই গম আমদানির ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্ব না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে খাদ্যসচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, তিনি মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ব্রাজিল থেকে এই গম আনা হয়।
রাজশাহী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পুলিশ মেসে রান্না করা ভাতে একধরনের গন্ধ, ছোট ছোট পাথর ও পোকা থাকে, এতে বাহিনীর সদস্যদের নানা রকম পেটের পীড়ার সম্মুখীন হতে হয়।

No comments

Powered by Blogger.