‘ভালো নেই, দোয়া চাই’ by রাহীদ এজাজ

নেগ্রিমসের অভ্যর্থনাকক্ষে সালাহ উদ্দিন আহমদ
মূত্রনালিতে সংক্রমণ, কিডনিতে পাথরের উপস্থিতি ও মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল থেকে গতকাল বুধবার বিকেলে নেগ্রিমস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে নেওয়ার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি ভালো নেই। দেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই।’
বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে করা মামলার বিচারকাজ শুরুর আগে নেগ্রিমসেই চলবে তাঁর উন্নত চিকিত্সা। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এসব কথা জানান নেগ্রিমসের (নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্সেস) পরিচালক এ জি এহেনগার ও শিলংয়ের পুলিশ সুপার এম খারক্রাং।
দুপুরে সিভিল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের চিকিত্সার জন্য গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাঁকে নেগ্রিমসে পাঠানোর সুপারিশ করে। বোর্ডের প্রধান ও হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ ডি জে গোস্বামী প্রথম আলোকে বলেন, কিডনিতে পাথর, মূত্রনালির সমস্যার জন্য বোর্ড তাঁকে বিশেষায়িত ওই হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে। কারণ, তাঁর মূত্রনালির সংক্রমণসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। এ সুবিধা শুধু নেগ্রিমসে রয়েছে।
১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফ-লিংক এলাকা থেকে আটকের এক দিন পর থেকে সালাহ উদ্দিন সিভিল হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, বেশ কয়েক দিন রাখার পরও সালাহ উদ্দিন আহমদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কোনো সুপারিশ না দেওয়ায় সিভিল হাসপাতালের ওপর অসন্তুষ্ট ছিল পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে গতকাল নেগ্রিমসে পাঠাতে চেয়েছে।
স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় সিভিল হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আট কিলোমিটার দূরের নেগ্রিমসে নেওয়া হয় সালাহ উদ্দিন আহমদকে। উত্তর-পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল হিসেবে স্বীকৃত নেগ্রিমস। এখানে হৃদ্রোগ, কিডনি, ইউরোলজিসহ বিভিন্ন রোগের বিশেষায়িত চিকিত্সা করা হয়।
অ্যাম্বুলেন্সে সালাহ উদ্দিনের পাশে বসে ছিলেন স্ত্রী হাসিনা আহমদ। সঙ্গে ছিলেন দুই সেবিকা ও এক পুলিশ সদস্য। অ্যাম্বুলেন্সটির সামনে ও পেছনে ছিল পুলিশের দুটি গাড়ি।
সিভিল হাসপাতালের ইউটিপি (বিচারাধীন মামলার আসামির) ওয়ার্ড থেকে হুইলচেয়ারে করে বেরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে সালাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভালো নেই, খুবই অসুস্থ। দেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই, যাতে আল্লাহ আমাকে সুস্থ করে দেন। আমার চিকিত্সার ব্যবস্থা করাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য এখানকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’
নেগ্রিমসের পরিচালক এ জি এহেনগার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিনের বেশ কিছু স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো হবে। এরপর তাঁকে একজন চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। কাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এ বিষয়ে জানানো সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে শিলংয়ের পুলিশ সুপার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, উপপরিদর্শক বি স্টেইন বাদী হয়ে ইতিমধ্যে শিলং সদর থানায় সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে আইন অনুযায়ী চিকিত্সকের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই তাঁকে আদালতে হাজির করা যাবে, এর আগে নয়।
সালাহ উদ্দিন আহমদের মামলা পরিচালনার জন্য অপরাধ আইনজীবী এস পি মোহান্তকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল সকালে হাসিনা আহমদ স্বামীর সঙ্গে তৃতীয় দিনের মতো দেখা করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সালাহ উদ্দিনকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার আগে তাঁর উন্নত চিকিত্সাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তিনি কিডনি ও হৃদ্রোগী। তাঁর পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কাঁপতে থাকেন। তাঁর উন্নত চিকিত্সা দরকার। কিডনিসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে তাঁকে তিনি সিঙ্গাপুরে নিতে চান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এস পি মোহান্তর সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে হাসিনা আহমদ বলেন, ভারতের আইন অনুযায়ী কোন পথে এগুলো ভালো হবে, তা বুঝে তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলে মোহন্ত তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.