বেতনের ১০০% বিপদ বোনাস by কাসাফাদ্দৌজা নোমান

রহিম সাহেবের বেতন বেড়েছে। কাল থেকে নতুন পে–স্কেল কার্যকর হবে। এ নিয়ে তিনি বিশেষ খুশি। অফিস থেকে ফেরার পথে এক কেজি মিষ্টি কিনলেন। বাসায় ঢুকতেই ছোট ছেলে লাফিয়ে উঠল কোলে, ‘ইয়াহু! বাবা!’
: আরে, হয়েছে কী!
: বাবা, এবার কিন্তু আমাকে গিটারটা কিনে দিতেই হবে। বেতন বেড়েছে। এবার আর ‘না’ করতে পারবে না কিন্তু!
আজ রহিম সাহেবের মন ভালো। ভেবে দেখলেন, ছেলেটা শখ করেছে, একটা গিটার কিনে দেওয়াই যায়। কিন্তু ঝামেলা বেধে গেল সেই খবরটা তাঁর মেয়ের কানে যাওয়ায়। মেয়েও এবার বায়না ধরল। ভাইকে যদি গিটার কিনে দেওয়া হয়, তাহলে সে–ও একটা ট্যাবের দাবিদার। এই অধিকার থেকে তাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। অতএব রহিম সাহেব কন্যাকে ট্যাব কিনে দেওয়ার কথাও দিয়ে দিলেন।
পরদিন সকালে রহিম সাহেবের ঘুম ভাঙল বড় ছেলের ডাকে। বেতন বেড়েছে, সে–ও কিছু চায়। তবে তার চাওয়া অন্যদের মতো নয়। সে চায় একটু সিঙ্গাপুর ঘুরে আসতে। ঘুমের ঘোরে সে ব্যাপারেও তিনি কথা দিয়ে ফেললেন। অফিসের জন্য বের হবেন, বুয়া এসে হাজির, ‘খালুজান, যদি কিছু টাকা দিতেন এই মাসে উপকার হইত। শুনছি, আফনের বেতন বাড়ছে।’ রহিম সাহেব কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন। দারোয়ান লম্বা একটা সালাম দিয়ে বলল, ‘স্যার, দ্যাশে যামু, যদি কিছু ট্যাকা দিতেন।’
‘পরে দেখা যাবে’ বলে বাসা থেকে বেরিয়ে রহিম সাহেব দুটো ফেরিওয়ালাকে দেখলেন। সবজি আর মাছ বিক্রি করছে। সবুজ সবজি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তা ছাড়া মাছগুলোও দেখতে বেশ তাজা লাগছে। তাই মাছওয়ালাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন।
: রুই মাছ কত?
: কেজি ২৮০ টাকা।
: গতকালই তো ২৫০ ছিল!
: হ, আছিল। আইজকা তো আপনাগো বেতন বাড়ছে। আইজকা থেইকা বাড়তি।
রহিম সাহেব মাছ না কিনে সবজি দাম করতে শুরু করলেন। সেখানেও বেতন বাড়া উপলক্ষে দাম বাড়তি। রেগেমেগে রিকশা ডাকলেন তিনি, ‘কারওয়ান বাজার যাবে?’
: যামু।
: কত?
: ৫০ টাকা।
: ৩০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চাও কেন?
: শুনছি, আইজকা থেইকা আপনাগো বেতন বাড়ছে। আমগোরে না দিলে খামু ক্যামনে?
রহিম সাহেব রিকশায় উঠলেন না। গতকাল ৪৫০ টাকা দিয়ে যে মিষ্টি কিনেছিলেন সেটা আপাতত তঁার কাছে অপচয় মনে হচ্ছে। সমস্ত রাগ উঠছে সরকারের ওপর। বেতন বাড়াও ভালো কথা, সেটা আবার ঢোল পিটিয়ে জানানোর কী দরকার! রাগ কমাতে চায়ের অর্ডার দিলেন রহিম সাহেব। খুব মন দিয়ে চা পান করলেন। এই একটা জায়গা আছে, যেখানে দাম খুব সহজে বাড়ে না। এসব ভাবতে ভাবতে চা শেষে পকেট থেকে পাঁচ টাকা বের করে চায়ের বিল দিতেই দোকানদার দাঁত বের করে হেসে দিল, ‘মামা, আরও দুই টাকা।’
: কেন?
: বেতন বাড়ছে, আমগোরে ঠকায়া লাভ আছে?
বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছা চলে গেল রহিম সাহেবের। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন, এই পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকবেন না। বিষ খেয়ে মরে যাবেন। এক্ষুনি! দোকানে গিয়ে ইঁদুর মারার বিষ চাইলেন।
: কত দাম?
: ১০০ টাকা, একদম নির্ভেজাল বিষ!
: গায়ে তো লেখা ৫০ টাকা!
: আগের লেখা তো। সরকার বেতন বাড়াইছে তাই ২০ টাকা বাড়তি!

No comments

Powered by Blogger.