সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র উদ্ধারে নাজিব রাজাকের নির্দেশ

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্র্থীদের জীবন রক্ষায় সহায়তা দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে এর ভার বহনের সহায়তা দেয়ার কথাও বলেছে। গতকাল ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এ কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানটোনি জে. ব্লিঙ্কেন। বুধবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ভাসমান ওই সব অভিবাসীকে ঠাঁই দেয়া সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যানটোনি জে. ব্লিঙ্কেন বলেন, সমুদ্রে জীবন ঝুঁকিতে এসব অভিবাসীর আহ্বানে সাড়া দেয়ার অভিন্ন বাধ্যবাধকতা রয়েছে আমাদের। ওদিকে সমুদ্রে ভাসমান বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বহনকারী বোট খুঁজে তাদের উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী ও উপকূল রক্ষী বাহিনীকে এ নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ওদিকে অস্ট্রেলিয়া অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট বলেছেন, তারা এমন অভিবাসীদের কোনভাবেই ঠাঁই দেবেন না। অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় পেতে হলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হবে। বুধবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ভাসমান ওই সব অভিবাসীকে ঠাঁই দেয়া সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মেরি হার্ফ এ প্রশংসা জানিয়ে বলেছেন, সবচেয়ে বিপন্ন এই শরণার্থীদের পুনর্বাসনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআইচসিআর যে উদ্যোগ নেবে যুক্তরাষ্ট্র তাতে গুরুদায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, এই অর্থবছরে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয়েছে এক হাজারেও বেশি রোহিঙ্গাকে। এ অর্থবছরের শুরু থেকেই মিয়ানমারের বিপন্ন মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে আমরা ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার দিয়েছি। তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই বৈঠকে বসলেও প্রাথমিকভাবে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া ভাসমান ৭০০০ অভিবাসীকে শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ীভিত্তিতে আশ্রয় দিতে রাজি হয়। পরে তাদের উদ্যোগের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে থাইল্যান্ড। গতকাল নাজিব রাজাক তার ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, আমি রয়্যাল মালয়েশিয়ান নেভি ও মালয়েশিয়ান ম্যারিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিকে রোহিঙ্গা বোটগুলোর জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের উদ্ধারে সক্রিয় ভূমিকায় নামছে মালয়েশিয়ার জাহাজগুলো- প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সে ইঙ্গিতই সুস্পষ্টভাবে বহন করে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে কিনা তা জানা যায় নি। প্রায় ৩ হাজার অভিবাসীকে এ পর্যন্ত আশ্রয় দিয়েছে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসমান মানুষগুলো যখন ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছিলেন তখন এ তিন দেশের ঘোষণায় অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছে। ওই তিন দেশ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে যে শর্ত দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে- তারা এসব মানুষকে উদ্ধার করে অস্থায়ীভিত্তিতে এক বছরের জন্য ঠাঁই দেবে। তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অভিবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বা তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসন করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেছেন, ত্রিদেশীয় এ উদ্যোগে ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এ উদ্যোগে সমর্থন দিতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। আগামী ২৯শে মে থাইল্যান্ডের উদ্যোগে রাজধানী ব্যাংককে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে জরুরি করণীয় নির্ধারণের জন্য বৈঠক হতে চলেছে। তাতে অনেক দেশের যোগ দেয়ার কথা। তবে এতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করলে যোগ দেবে না বলে আগেভাগে জানিয়ে দেয় মিয়ানমার। তবে শেষের দিকে এসে ইঙ্গিত মিলছে তারাও ওই সম্মেলনে যোগ দিতে পারে। এ বিষয়ে মেরি হার্ফ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এ অঞ্চলের সব দেশই এই সম্মেলনে আলোচনা করতে যোগ দেবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রেরও উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। ভাসমান অভিবাসী ও যারা আশ্রয়ের সন্ধানে সমুদ্রে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে  তাদেরকে রক্ষার জন্য দ্রুত সক্রিয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে এসব মানুষকে কোন দেশ যেন তাড়িয়ে না দেয়। মেরি হার্ফ পরিষ্কার করে বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড সমন্বিতভাবে এ ইস্যুতে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। তাদের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।

No comments

Powered by Blogger.