দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশা

চেয়ারম্যান একরাম হত্যার এক বছর
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে নাম আসা এবং গ্রেপ্তার হওয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দল থেকে এক বছরেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাগারে থাকা একজন পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় গত বুধবার হত্যাকাণ্ডের এক বছর হয়ে গেল। একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তার বলেছেন, এ পরিস্থিতিতে তাঁরা হতাশ। শুধু দলের ব্যাপারে নয়, হত্যা মামলাও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁরা।
একরামকে গত বছরের ২০ মে ফেনী শহরের একাডেমি এলাকায় দিনের বেলায় গাড়ির ভেতরে গুলি করার পর গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তাঁর ভাই রেজাউল হক বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ওরফে মিনার চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই খুন হন একরাম।
মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্রে নাম আসে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর (বিরিঞ্চি) ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু, ফেনী পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আনন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল হোসেন, কাজিরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রবসহ দলীয় আরও কয়েকজনের।
একরাম হত্যার ঘটনায় অভিযোগপত্রভুক্ত ও গ্রেপ্তার হওয়া আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করি।’ তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে একাধিক সভায় আলোচনা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে শাস্তির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
একরাম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি ও কারাগারে আটক পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ ওরফে শিবলুর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র আলাউদ্দিন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না, এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, চেয়ারম্যান একরাম হত্যার ঘটনায় গত বছরের ২৮ আগস্ট মোট ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। পুলিশ ও র্যা ব ইতিমধ্যে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করছে। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কোনো না কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি ২১ জন পলাতক।
ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, অভিযোগপত্র ভুক্ত যে ২১ জন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
একরামের স্ত্রী তাসমিন আক্তার জানান, গতকাল একরামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে শহরের মাস্টারপাড়ার বাসভবন, ফুলগাজীর বন্দুয়া দৌলতপুর গ্রামের বাড়িতে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া একাধিক এতিমখানায় খাবার দেওয়া হয়েছে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের জেলা বা উপজেলার কোনো নেতা-কর্মী তাঁদের বাসায় যাননি, এমনকি খোঁজখবরও নেননি।
এদিকে ফুলগাজী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীম জানান, সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.