আমরা সমরাস্ত্রও রপ্তানি করবো

অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানির বিষয়ে মনোযোগী হতে বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবকিছু আমদানি নয়। আমরা নিজেরাই আমাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি করবো। আমাদের এ বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে যে, দরকার ও যথোপযুক্ত হলে আমরা সমরাস্ত্র রপ্তানিও করতে পারবো। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি গতকাল শেরেবাংলা নগরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা বলেন। প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আওয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনী প্রধানগণ এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুরক্ষায় বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে আধুনিক, সময়োপযোগী ও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করা ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সুসংহত রাখতে উন্নত, আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে অধিকতর শক্তিশালী করতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ, ভৌত ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প। তিনি বলেন, সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেছে এবং এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণের কার্যক্রম চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রথাগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অগ্রগতির ধারা সুসংহত করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী বাহিনীতে পরিণত করতে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংগ্রহ অব্যাহত থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন পুনর্গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, তারা ভবিষ্যতেও নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন এবং নিজেদের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবেন। নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের অতি দ্রুত বাংলাদেশের সহযোগিতা পৌঁছে দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রয়োজনে এক লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলায় বাংলাদেশের বিজয় অর্জন প্রসঙ্গে বলেন, সরকারের দক্ষতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরাজমান সমস্যার সমাধান করে বিশাল সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় স্থলসীমান্ত বিল অনুমোদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সবই হচ্ছে সরকারের গৃহীত নীতি ও প্রয়াসের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সাফল্য। অন্যের কাছে ভিক্ষা করে নয়, আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আমরা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতেই হবে।
সাধারণ মানুষও যেন সুফল পায়: ব্যবসায়ীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর সুফল যাতে সাধারণ মানুষও পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে। ভারতের পার্লামেন্টে ‘সীমান্ত বিল’ পাসে ছিটমহল বিনিময়ের বাধা কাটায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। তার জন্য সকল সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দেব। কিন্তু এর সুফলটা একাই ভোগ করবেন না, সাধারণ মানুষ যেন ভোগ করতে পারে- সেদিকে একটু বিশেষভাবে দেখবেন। দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ব্যবসায়ীদের কাজ করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমি এতটুকু বলবো- দেশের কথা চিন্তা করেই সকলে যেন ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। কে কতো বেশি লাভ করলেন সেটা বড় কথা না। দেশের জন্য কতটুকু করতে পারলেন, সেটাই বড় কথা। এই দিকে একটু তাকাতে হবে। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে নতুন বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন প্রণোদনা দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমরা আরও কিছু প্রণোদনা দেব। সেটা আমরা এখন বলব না। আমরা চার তারিখে বাজেট দেব। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলবেন। ভারতের পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাস হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যার সমাধান করেছি। এখন আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণ করা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা এমনভাবে যেন একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সেটা যেন নিশ্চিত হয়। সেই সঙ্গে আমরা প্রত্যেকেই স্বাধীন দেশ। ছোট-বড় সেটা বড় কথা নয়। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ আমাদের। সেই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসাবে সমমর্যাদা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বক্তব্য রাখেন। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। সংগঠনের সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী ও মো. হেলালউদ্দিনও মঞ্চে ছিলেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য,  ঢাকার দুই মেয়র এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.