সেনা মোতায়েন নিয়ে নতুন বিতর্কে ইসি

সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিনই তা পরিবর্তন করে আবারও বিতর্কিত হলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনা কমিশনের সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকার আরেকটি বড় নজির।
সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ না চাইলেও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিশন আপাতদৃষ্টে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিল। কিন্তু সেই দৃঢ়তা ২৪ ঘণ্টাও টেকেনি। কমিশন মঙ্গলবার চার দিনের জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেও বুধবার রাতে বলেছে, সেনাবাহিনী সেনানিবাসেই থাকবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা ডাকলে তারা বাইরে আসবে।
জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে সেটাই শুধু উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। কাজ করতে গেলে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকে, পরে সেগুলো শুদ্ধ করা হয়। চিঠিটা মূলত প্রতিস্থাপিত হয়েছে।’
একাধিক মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সেনা মোতায়েন না চাইলেও এ বিষয়ে প্রথমে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নমনীয়। পরে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এ বিষয়ে অবস্থান বদলায় এবং সেই অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনও সিদ্ধান্ত পাল্টায়।
ইসি সূত্র জানায়, কমিশন চিঠি সংশোধন করে বুধবার সন্ধ্যার পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের দপ্তরে পৌঁছে দেন। কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব শামসুল আলমের সই করা সংশোধিত চিঠিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ-সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বলা হয়েছে, প্রতি সিটিতে এক ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্য ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত (ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে থেকে ভোট গ্রহণের পরদিন পর্যন্ত) দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে অবস্থান করবেন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুরোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কাজ করবে। চিঠির এই অনুলিপি উপসচিব নিজ হাতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কাছে পৌঁছে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিজার্ভ ফোর্স’ শব্দটি অপারেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কোথাও অপারেশন চালাতে হলে সেনাবাহিনীকে সেনানিবাস থেকে বের হওয়ার জন্য এক থেকে দেড় ঘণ্টার নোটিশ দেওয়া হয়। বের হওয়ার পরই তারা রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভাগ হয়ে যায়। তাঁর মতে, সেনানিবাসের ভেতরে থেকে ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হওয়ার সুযোগ নেই। সেনাবাহিনী তো সেনানিবাসের ভেতরেই থাকে। আর ভেতরে থাকলে মোতায়েন হয় কীভাবে?
জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, সেনা মোতায়েন করাটা ইসির সিদ্ধান্ত। কীভাবে তারা এটা কার্যকর করবে সেই এখতিয়ারও ইসির। তাই কমিশন যেভাবে চাইবে সেভাবেই সেনা মোতায়েন হবে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ইসি যদি বলে সেনাবাহিনী বাইরে মোতায়েন করতে হবে, সেটিই করা হবে। আবার ইসি মনে করতে পারে সেনাবাহিনী ব্যারাকে থাকবে, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন ডাকলে বাইরে আসবে।
এর আগে ২১ এপ্রিল সিইসি বলেছিলেন, ‘আমাদের এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী ডাকার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবুও অতি সম্প্রতি আমরা খুব আতঙ্কিত সময় অতিবাহিত করেছি। জনগণ এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। ভোটারদের মনে মানসিক স্বস্তি দিতে আমরা সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে বলেছি।’
সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্ত থেকে কৌশলে ইসির সরে আসা প্রসঙ্গে বিএনপি বলেছে, নির্বাচন কমিশন এক চোখা নীতি নিয়ে চলছে। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা আছে, কিন্তু সরকারের নেই। এ জন্য সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত দিয়ে নির্বাচন কমিশন আবার পিছু হটেছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ ও ১৩০ ধারায় বলা আছে, কোথাও কোনো গোলযোগ দেখা দিলে তা ছত্রভঙ্গ করার জন্য দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট সেনাবাহিনী তলব করতে পারবেন। তখন সেনাসদস্যরা গোলযোগকারীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য আটক করতে পারবেন।
সিদ্ধান্ত বদলানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিইসি গতকাল আরও বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট হলো ঢাকা সিটির কেন্দ্রবিন্দু। মিরপুরে যেতে গেলেও ক্যান্টনমেন্ট বেটার, আসতে গেলেও বেটার। তাদের তো এক জায়গায় থাকতে হবে। কৌশলগতভাবে ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুভ করাটা সেনাবাহিনীর জন্য সহজ হবে। তাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন।’

No comments

Powered by Blogger.