রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না

বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার সমালোচনা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট। গতকাল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বার্ষিকীতে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ সমালোচনা করেন। ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণ করে বার্নিকাট বলেন, ওই দিন যারা মারা গিয়েছিলেন তাদেরকে প্রাণ দিতে হয়েছিল শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে, ভবনটি অনিরাপদ ছিল, এর আরও একটি কারণ ছিল, ওই সব শ্রমিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। বার্নিকাট বলেন, দুই বছর আগে রানা প্লাজার ভবন ধসে বহু প্রাণহানি ঘটেছিল, আর অনেকের জীবন বদলে গিয়েছিল চিরতরে। আজকে আপনাদের সঙ্গে এখানে যোগ দিয়ে গভীর দুঃখের সঙ্গে আমি তাদেরকে স্মরণ করছি। ওই বিয়োগান্তক ঘটনাটি ছিল আমাদের সকলের জন্য একটি সতর্কতামূলক বার্তা, এই ট্র্যাজেডি এক নজিরবিহীন উপায়ে আমাদের সবাইকে কাজ করার জন্য এক করেছে যাতে করে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। তৈরী পোশাকখাতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা চিহ্নিতকরণে অসাধারণ অগ্রগতি ঘটেছে। শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি বলেন, অনেক শ্রমিকই একটি ইউনিয়ন সংগঠিত করতে চায় কারণ তারা কারখানার কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেমন ঠিক সময়ে সঠিব পরিমাণে বেতন পাওয়া, এমনকিছু মৌলিক বিষয় যেমন পান করার পরিষ্কার পানি, পরিচ্ছন্ন জায়গায় খাওয়া এবং নিরাপদ পরিবেশে কাজ করা। এই সব কিছু বিষয় শ্রমিকরা আলোচনা করতে চায়। সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ সরকারের দিকে যাতে তারা বিশ্বকে দেখাতে পারে যে তারা পোশাক খাতের এই সকল নারী-পুরুষ শ্রমিকদের অন্যতম মৌলিক শ্রম অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে- তা হচ্ছে সংগঠনের স্বাধীনতা, তারা একটি ইউনিয়ন গঠন করবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ইউনিয়নের নেতা নির্বাচন এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে সমষ্টিগতভাবে দর-কষাকষি করার অধিকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে। কিন্তু আরও কাজ বাকি রয়েছে। আমরা জানি যে, কেউ কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠনে বাধা প্রদান করেছেন। আমরা জানি শ্রমিকগণ ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টা করতে গেলে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে, পেটানো হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড অবৈধ ও আইনত দণ্ডনীয়। বাংলাদেশ সরকার এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খুব ধীর গতিতে কাজ করেছে অথবা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। আমরা জানি, শ্রম মন্ত্রণালয় ইউনিয়ন গঠনে চেষ্টারত শ্রমিকদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রশ্ন করেছে। খুব সম্ভবত শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শকগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং ভীত শ্রমিকরা স্বীকার করতে পারেননি যে তারা ইউনিয়ন গঠন করতে চেষ্টা করছেন। এটা কি অবাক হওয়ার মতো বিষয়? তিনি বলেন, শ্রমিকদের কথা শোনা হয় না- প্রকৃতপক্ষে তাদের কণ্ঠস্বর থামানো যাবে না এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে না।

No comments

Powered by Blogger.