শাহজালাল বিমানবন্দর- ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা by দীন ইসলাম

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে দুই দিনে তিনটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এসব টুকরো ঘটনা অবহিত করতে অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। গত ২৪শে মার্চ এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়। বিমানবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসআর এন্টারপ্রাইজের কাস্টমস সরকার মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে এপিবিএন সদস্যের বচসা ও পরে মামলা হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে চিঠির শুরুতে। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সিলেটের (বর্তমানে উত্তরা, ঢাকা) অধিনায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সোয়া ৩টায় মো. মিজানুর রহমান বিমানবন্দরের ইমপোর্ট কার্গো দিয়ে অবৈধভাবে এয়ারসাইড এলাকায় প্রবেশ করেন। এরপর আমদানি করা মালামালের মধ্য থেকে একটি কার্টন খুলে সন্দেহজনকভাবে মালামাল বের করতে থাকেন। এ সময় কর্তব্যরত এপিবিএন সদস্য কং/৯৬৬৬ মো. নাজমুল হোসেন তার বৈধ কাগজপত্র ও আইডি কার্ড দেখাতে বললে তিনি কোন ধরনের আইডি কার্ড প্রদর্শন করেননি। পরে পোস্ট কমান্ডার এএসআই মো. আসাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মিজানের আইডি কার্য পরখ করে দেখেন গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর তার আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তখন কং/৯৬৬৬ মো. নাজমুল হোসেন মো. মিজানুর রহমানকে বৈধ কাগজপত্র ও আইডি কার্ড ছাড়া মালামাল বের করার জন্য নিষেধ করেন। তখনই ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান পুলিশ সদস্য মো. নাজমুলের কলার ধরে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তিনি চিৎকার দিতে শুরু করেন। চিৎকার শুনে আশপাশের ফোর্সরা ঘটনাস্থলে এসে মিজানের হাত থেকে নাজমুলকে উদ্ধার করা হয়। এমন ঘটনার পর মো. মিজানুর রহমানকে আটক করে বিমানবন্দরের এপিবিএন কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয় এবং পুলিশ সদস্য নাজমুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে আটককৃতের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদান, স্বেচ্ছাকৃতভাবে মারপিট করে জখম করার দায়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করে মিজানকে হস্তান্তর করা হয়। যার মামলা নং-৫৭, তারিখ: ২৪.০২.২০১৫। একই দিন বেলা ২টায় বিমানবন্দরের অপারেশন সেন্টার গেট দিয়ে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার প্রবেশ করতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য কং/৮৮৮৫ মো. পাভেল মিয়া গাড়িটিকে থামান। এ সময় পুলিশ সদস্য সিভিল এভিয়েশনের পাস ছাড়া কোন গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানান। তখন গাড়ির পেছনে বসা শাম্মী আক্তার ও খালেদা জাবীন তাদের পরিচয় দেয়ার পরও নায়েক/৮২০৯ তপন নাথ ও কং/৮৮৮৫ পাভেল তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি ওয়াকিটকি সেটের মাধ্যমে শিফট ইনচার্জ (সহকারী পুলিশ সুপার) মোসা. নাসরিন আক্তার অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান এবং ভদ্র মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের চিঠিতে এ ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কর্তব্যরত এপিবিএন সদস্যরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করলে ভদ্র মহিলারা তাদের ক্ষমা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত আচরণ করার প্রতিশ্রুতি দেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শাম্মী আক্তার ও খালেদা জাবীনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে দায়ী পুলিশ সদস্যদের ব্যাটালিয়ন সদরে ক্লোজ করা হয় এবং সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সেতুয়া পারভীনকে ঘটনা সুষ্ঠু অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ী এপিবিএন সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এদিকে ২৫শে ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় বিমানবন্দরের আগমনী ২নং ক্যানোপি এলাকার কারপার্কিং থেকে বিমানবন্দরের আনসার সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় কামরুজ্জামান টুপির ভেতর থেকে বের করে সাদা টেপে মোড়ানো দুটি স্বর্ণের বার এ কে এম মাসুম বিল্লাহর কাছে হস্তান্তরের সময় এপিবিএন সদস্যরা তাদের আটক করেন। স্বর্ণের বারের ওজন ২০০ গ্রাম এবং আনুমানিক মূল্য আট লাখ টাকা। জিজ্ঞাসাবাদে আনসারের পিসি মো. কামরুজ্জামান জানান, রিজেন্ট এয়ারলাইনসের ফ্লাইটযোগে সিঙ্গাপুর থেকে আসা এক যাত্রী তাকে স্বর্ণের বার দুটি দিয়েছেন। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে বের করে এ কে এম মাসুম বিল্লাহর কাছে হস্তান্তর করার জন্য। তাদের দুজনের কাছ থেকে জব্দকৃত মোবাইলের ডায়াল ও রিসিভ কল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তারা দুজনেই কয়েকবার কথোপকথন করেছেন। পরে আটককৃত আনসার সদস্য ও আর একজনকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তরপূর্বক মামলা করা হয়। বিমানবন্দর থানায় মামলা নং-৬১, তারিখ: ২৬.০২.২০১৫। পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা। এ কারণে সব ঘটনা সরকারের ঊর্ধ্বতনকে অবহিত করতে হয়। এর অংশ হিসেবেই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা জানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.