মিজানুরের সারা দেহে এখনো আঘাতের চিহ্ন

নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক মিজানুর রহমান l ফাইল ছবি
‘আমরা মিজানকে ভালোভাবে দেখেছি। ওর হাত-পা থেকে শুরু করে পুরো শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন অঙ্গের হাড়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাংসে আঘাতের কারণে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। মিজানের দেওয়া বর্ণনায় নির্যাতনের একপর্যায়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এ কারণে মস্তিষ্কেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।’
পুলিশের অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার প্রথম আলোর পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমানের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এসব তথ্য জানান তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের আহ্বায়ক পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) মো. মনিরুল আহসান। এমন শারীরিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে মিজানুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, কিডনিসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মিজানুর রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা গতকাল রোববার সকালে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে। ১৭ মার্চ রাতে বাউফল উপজেলার কালাইয়ার ল্যাংড়া মুন্সির পোল এলাকায় কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনায় কালাইয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হালিম খান বাদী হয়ে সাংবাদিক মিজানুরের বিরুদ্ধে মারধর ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে বাউফল থানায় একটি সাজানো মামলা করেন। রাতেই মিজানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে থানায় নিয়ে রাতভর আটকে নির্যাতন করে একদল পুলিশ।
আদালতের নির্দেশে মিজানুরের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে গত বুধবার চার সদস্যের ওই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। গতকাল ছিল তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিন। সেই অনুযায়ী সকাল ১০টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর কারাগার থেকে একটি পিকঅ্যাপ ভ্যানে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পিকঅ্যাপ ভ্যান থেকে নামার সময় তাঁর চোখে-মুখে ছিল তীব্র যন্ত্রণার ছাপ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনো রকমে হাসপাতালে প্রবেশ করেন তিনি। পরে দুই ঘণ্টা ধরে চলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিভিল সার্জন এ এম মজিবুল হক জানান, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা মিজানুর রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে গতকাল সুপারিশ করেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বোর্ডের ব্যবস্থাপত্র জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পরদিন ১৮ মার্চ সকালে পটুয়াখালীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম-২ ফাইজুর রহমানের আদালতের মাধ্যমে মিজানকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ২২ মার্চ পটুয়াখালীর দ্বিতীয় বিচারিক হাকিম এ এস এম তারিক শামসের আদালত মিজানুরের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
নিম্ন আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে মিজানুরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আবেদনের ওপর ২৪ মার্চ শুনানি গ্রহণ করেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক বিমল চন্দ্র সিকদার। তিনি মিজানুর রহমানের স্বাস্থ্য পরীক্ষর জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন ও ৩১ মার্চের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া ফের শুনানির জন্য ১ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.